Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:28 pm

খেলাপি শিল্পঋণ নিয়ে দুর্ভাবনা দূর হোক

সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে এবং সেটি নিয়ে সংগত কারণে দুর্ভাবনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এ ধারার সাম্প্রতিক সংযোজনটি বোধকরি গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘এক বছরে শিল্পঋণে খেলাপি বেড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামের খবরেই প্রতিফলিত। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যেখানে শিল্পঋণে খেলাপির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, সেখানে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি ঘটেছে ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশের মতো। এটি পরিস্থিতির বৃহৎ চিত্র। বিস্তারিত তথ্যে দেখা যায়, কেবল চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে হিসাবকৃত শিল্প খাতের ঋণ তিন মাসের ব্যবধানে এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধি পায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এ থেকেই সম্ভবত অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন শেয়ার বিজের কাছে মন্তব্য জানিয়েছেন, ‘পুনঃতফসিল করা ঋণ আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।’ তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করেও বলা যায়, শিল্প খাতে খেলাপি ঋণকে নিছক সাদা বা কালো এ দুই ক্যাটাগরিতে ফেলা কঠিন। ইস্যুটি নিয়ে তাই অধিকতর আলোচনা হতে পারে।

প্রথম কথা, খেলাপি ঋণ মানেই মন্দ ঋণ নয়; শিল্প খাতের বেলায় কথাটি আরও বেশি প্রযোজ্য। কেননা অন্যান্য ঋণের সঙ্গে শিল্পঋণের বড় ব্যবধান হলো, এ খাতের ঋণ সাধারণত পুরোটাই দ্রæত বিনিয়োগে পরিণত হয়। ফলে শিল্প খাতের খেলাপি ঋণকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ‘মন্দ’ আখ্যা দেওয়াটা অসমীচীন। সেজন্য উল্লিখিত খেলাপি ঋণ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিরূপ মন্তব্য করা ন্যায়সংগত হবে না। দ্বিতীয় বিষয়, শিল্পঋণ সাধারণত পুরোটাই বিনিয়োগে পরিণত হলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে বড় ও বিপজ্জনক ব্যতিক্রম বিদ্যমান। এখানে এমন ঘটনাও রয়েছে, বাস্তবে কিছু না থাকা সত্তে¡ও কেবল কাগুজে শিল্প-কারখানা উপস্থাপন করে এবং একশ্রেণির ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে স্রেফ লোপাটের উদ্দেশ্যে বিপুল ঋণ নেওয়া হয়েছে ব্যাংক থেকে। এক্ষেত্রে যেহেতু উদ্দেশ্যই আত্মসাৎ, তাই ওই ঋণের কমই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় পরবর্তীকালে। হল-মার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারির চেয়ে ভালো উদাহরণ কী হতে পারে এক্ষেত্রে! দৃষ্টান্ত রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাগিদও কম নেই তবু কেন জানি শিল্পে খেলাপি থেকে মন্দ বনে যাওয়া ঋণের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ফলে আবারও যখন দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেই শিল্প খাতের বৃহত্তম ঋণখেলাপি, তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে থাকে, বিশেষত ঋণ প্রদানের বেলায়। এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ঋণ পাওয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীর পক্ষে কঠিন বলে অভিযোগ রয়েছে। তদুপরি তাদের আছে ঋণ প্রদানের ঊর্ধ্বসীমা। সেটি মাড়িয়ে অনেক বৃহৎ ব্যবসায়ীর পক্ষেও নাকি অনেক সময় সম্ভব হয় না কাক্সিক্ষত মাত্রায় ঋণ নেওয়া। সেক্ষেত্রে অনেক উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীর ভরসাস্থল হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এদিকে যে কোনো ঋণ প্রদানের আগে যে ধরনের যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনে এখনও তার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ প্রবল। ফলে শিল্প খাতে খেলাপি তথা মন্দ খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাসে ঋণ ছাড়ের আগে তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন। বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ দৃষ্টি দেবে এটাই প্রত্যাশা। নইলে শিল্প খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে দুর্ভাবনা কমবে না।