খেলার মাঠ ও সড়কে মাদকাসক্তদের আড্ডা বন্ধ করুন

শহরজুড়ে বহুতল ভবন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কমছে মাঠ ও খোলা জায়গার সংখ্যা। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। শিশুদের মোবাইলবন্দি শৈশব থেকে বের করে খেলাধুলায় আগ্রহী করতে চাইলেও শহরে নেই সেই রকম পর্যাপ্ত নিরাপদ পরিবেশ। যতটুকু আছে, তাও মাদকাসক্তদের কারণে নষ্ট হওয়ার পথে। ফলে অভিভাবকরা সন্তানদের বিকালে কিংবা সন্ধ্যার পর প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় কাটানো কিংবা মাঠে খেলাধুলার জন্য পাঠাতে চাইলেও সম্ভব হচ্ছে না নিরাপদ পরিবেশ না থাকায়।

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার শূন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কমছে না মাদকসেবীর সংখ্যা বরং দিন দিন মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, শিক্ষিত অশিক্ষিত, ভবঘুরে সব বয়স-শ্রেণির মানুষই মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হচ্ছে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রেহায় পাচ্ছে না খেলার মাঠগুলো। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীর খেলার মাঠগুলোর চারপাশে মাদকসেবীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। মাদকসেবীরা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ববান লোক কিংবা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সতর্ক হয়ে গেলেও স্কুলের শিক্ষার্থী, পথচারী কিংবা মাঠে খেলারত ছেলেদের সামনে দেদার মাদকসেবনে মত্ত থাকে। কেউ প্রতিবাদ করে তাদের সরে যেতে বললে সরে না গিয়ে উল্টো মারমুখী আচরণ করে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীন প্যারেড গ্রাউন্ড, সিটি করপোরেশনের অধীন লালদিঘীর মাঠ, ময়দার মিলস্থ স্কুল মাঠসহ নগরীর প্রায় সব উম্মুক্ত মাঠের মধ্যে মাদকসেবীর আড্ডা বেড়ে যাওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিশুদের খেলাধুলায় চরম বিঘ্ন ঘটছে। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, ঢাকা এবং ব্যস্ত শহরগুলোতে একই চিত্র। বিশেষ করে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক খেলার মাঠগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং শিশুদের জন্য দোলনাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাসামগ্রী স্থাপনের ফলে সকালে কিংবা রাতে লাইটের আলোতে অভিভাবকরা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে মাঠে আসার পর মাদকসেবীদের আনাগোনা এবং মাদকের দুর্গন্ধের ফলে সন্তানদের নিয়ে মাঠে সময় কাটানোর পরিবর্তে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়। এ নিয়ে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে মাঠ কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা জারি না করায় এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে মাদকসেবীদের আড্ডা দিন দিন বাড়ছেই।

শুধু খেলার মাঠেই নয়, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘীর মসজিদ এলাকা ও হযরত শাহ সুফী আমানত খান (র.) মাজার এলাকা ও লালদিঘীর উত্তর-পূর্বপাড়, সিটি করপোরেশনের লাইব্রেরি ভবনের দক্ষিণে খেলার মাঠের পাশে এবং আমানত শাহ মাজার গেটের সম্মুখস্থ অর্থাৎ জেল রোডে মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এসব মাদকাসক্তদের অধিকাংশই ভবঘুরে প্রকৃতির লোক। যারা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকেই মাদক সেবনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এই মাদকসেবীরাই মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য এলাকায় চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায়।

কাজেই চট্টগ্রাম শহরের সকল খেলার মাঠ এবং ধর্মীয় স্থাপনা ও পীর আউলিয়াদের দরগাহ-মাজারের চারপাশে স্থিত মাদকসেবীদের আড্ডাখানা গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য মাঠ কর্তৃপক্ষ, মাজার কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজ এবং প্রশাসন মিলে যেকোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রীসহ ক্রীড়া-বিনোদনপ্রেমী সব মানুষের নিরাপদ যাতায়াত এবং খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে খেলার মাঠ এবং ব্যস্ত ধর্মীয় স্থাপনা-রাস্তাগুলোর মাদকসেবীদের রুখে দেয়া কঠিন কাজ হবে না।

জুবায়ের আহমেদ

বাকলিয়া, চট্টগ্রাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০