খোলপচা ও মাজরা পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

প্রতিনিধি, যশোর: বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না যশোরের আমনচাষিদের। একদিকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নিচু জমির ফসল, অন্যদিকে উঁচু জমিতে অবশিষ্ট যে আমন ক্ষেত রয়েছে, সেখানে দেখা দিয়েছে খোলপচা রোগ ও মাজরা পোকার আক্রমণ। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। এতে চলতি মৌসুমের আমনের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন যশোরের চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দিলেও এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরে এক লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দিন আগের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৮৫ হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় পানি সরে যাওয়ার পর ধানগাছ মাথা উঁচু হয়ে থাকলেও সেগুলোয় পোকার আক্রমণ বেড়েছে। আর উঁচু জমিতে অবশিষ্ট যে ধানের ক্ষেত আছে, সেগুলোর ভালো ফলনের লক্ষণ দেখা দিলেও শেষ সময়ে খোলপচা রোগ দেখা দেয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

যশোর সদরের চাঁচড়ার বিল হরিনায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আমন ধানের ক্ষেতে কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। কৃষকরা জানান, ধানের গোড়ায় পচন রোগ দেখা দেয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। শরিফুল ইসলাম নামে এক চাষি বলেন, মাত্র কয়েক দিন আগে এসব ধান পানির নিচে ছিল। এরপর পানি সরে যাওয়ার পর সার-কীটনাশক দিয়ে সতেজ করা হলেও পচন রোগ দেখা দেয়ায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

আব্দুর রশিদ নামে আরেকজন চাষি বলেন, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে খোলপচা রোগ দেখা দিয়েছে। আর উঁচু জমিগুলোয়ও মাজড়া পোকার আক্রমণ বেড়েছে। তিনি বলেন, তার তিন বিঘা জমিতে খোলপচা অর্থাৎ কাণ্ডপচা রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বেশি বেশি ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে বলছে। তবে এতে খরচ বেশি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
গনি মিয়া নামে আরেক চাষি বলেন, এবছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আমন ধান ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছর সেচনির্ভর আমন চাষ হলেও এবার তা হয়নি। তবে শেষ সময়ে খোলপচা রোগ ও মাজড়া পোকার আক্রমণের কারণে ফলন কম হবে বলে মনে হচ্ছে।

কৃষক বলেন, ৩৩ শতকে পাঁচ কেজি করে পটাশ ছিটিয়ে দিলে এ রোগ দমন হয়। তবে এত টাকা কোথা থেকে পাব, সেই চিন্তায় আছি। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, অতিমাত্রার বৃষ্টির কারণে ধানের ক্ষেত পানির নিচে ডুবে থাকায় কাণ্ডপচা বা খোলপচা রোগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় চাষিদের খোলপচা রোগ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষার জন্য এজোস্ট্রবিন ও সাইকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাতা মোড়ানো পোকা দমনে ক্লোরোপাইরিফস বা সাইফার মেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষক যদি এসব কীটনাশক সময়মতো প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে এসব রোগ থেকে ধান ক্ষেত সহজে রক্ষা করা সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০