Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:59 pm

খোলাবাজারে ১১৮ টাকায়ও মিলছে না ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশগামী লোকদের নগদ ডলারের প্রধান উৎস খোলাবাজার। তবে এসব মানুষ খোলাবাজারে এসে নগদ ডলার পাচ্ছেন না। বেশি দামে ডলার বিক্রির অপরাধে সম্প্রতি বেশ কিছু মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত ও সিলগালা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভয়-আতঙ্কে ডলার বেচাকেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে মানি এক্সচেঞ্জগুলো। ফলে খোলাবাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় ডজনখানেক একচেঞ্জ হাউসে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোথাও ডলার পাওয়া গেলেও নগদে কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৮ থেকে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এ দরেও ডলার দিতে পারছে না বেশিরভাগ মানি চেঞ্জারগুলো। আগের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী, রোগী ও পর্যটক বিদেশে যাওয়ায় নগদ ডলারের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন মুদ্রাটির দাম বেড়ে গেছেও বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, গত মাসের শেষের দিকে ইচ্ছামতো দরে ডলার বিক্রি করে মানি চেঞ্জারগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ডলার বিক্রি করায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে খোলাবাজারে চলে অভিযান। ইতোমধ্যে সাতটি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি একই কারণে আরও ১০ মানি চেঞ্জারের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।

মতিঝিল ও দিলকুশার একাধিক মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দরে ডলার কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়তি দর দিলে বিক্রেতারা ডলার বিক্রি করছে। তাই তাদেরও বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দরে ডলার ব্যাংকও দিতে পারবে না।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানের কারণে ডলার ব্যবসায়ই ভাটা পড়েছে। ডলার থাকলেও জব্দের ভয়ে ব্যবসায়ীরা ডলার বের করছেন না। অনেকে ফোনে লেনদেন সম্পন্ন করছেন। কোনো বিশ্বস্ত গ্রাহক ফোন করে ডলারের অর্ডার করলে তখন তারা গোপনে বিক্রি করছেন। ফলে প্রয়োজন হলেও পরিচিত ছাড়া বিদেশগামী যাত্রীরা ডলার কিনতে পারছেন না। এমনকি বিদেশফেরতরাও মানি এক্সচেঞ্জে এসে ডলার বিক্রির সাহস পাচ্ছেন না।

রাজধানীর মতিঝিলে একটি মানি চেঞ্জারে হাবিব নামের এক প্রবাসীর সঙ্গে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যাব, নগদ কিছু ডলার লাগবে। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে পাইনি। তাই মানি চেঞ্জারে এলাম ডলার কিনতে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেও ডলার পেলাম না। পরে একজন মানি চেঞ্জারের কাছ থেকে বাহিরে গিয়ে কিনলাম ৫০০ ডলার। রেট নিল ১১৮ টাকা। তবে মানি চেঞ্জারের রেট দেয়া ছিল ১১২ টাকা ৬০ পয়সা।’

মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব সেখ হেলাল সিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের কারণে মানুষ আতঙ্কে ডলার বিক্রি করতে আসছেন না। তাই ডলারের সংকট রয়েছে। আর মানি চেঞ্জারে কেউ ঘোষিত দরে ডলার পাচ্ছে না। তাই নির্ধারিত দরে বিক্রিও করতে পারছে না। তাই অনেকে ডলার ধরে রাখছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলারের সংকট সমাধানে এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে,

 তার সবই অস্থায়ী ভিত্তিতে। সংকট কমবে, এমন কোনো কার্যকর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। ডলার-সংকটের জন্য যারা দায়ী, বিশেষত অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। এটা না করে উল্টো বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা সংকট আরও উসকে দিচ্ছে। ফলে গত আগস্টে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের পতন হয়েছে।

গত বছরের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) থেকে এখন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।

চলতি সেপ্টেম্বর থেকে আমদানিকারকদের কাছে ১১০ টাকায় ডলার বিক্রি করছে ব্যাংকগুলো। আগে আমদানি দায় মেটানোর জন্য ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করত। এদিকে পণ্য বা সেবা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কেনায় ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসীদের প্রতি ডলারের জন্য ১০৯ টাকা এবং রপ্তানিকারকদের প্রতি ডলারের জন্য ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দিত। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে ডলার কেনাবেচা করায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১০টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। এ কারণে গত আগস্টে প্রবাসী আয় ২১ শতাংশের বেশি কমেছে।