সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম:দেশের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকায় আমদানিকৃত খোলা সয়াবিন তেল খোলা বাজারে লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬৬ টাকায়। ব্র্যান্ডভেদে কোম্পানিগুলোর বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৯৯ টাকায়। লিটারপ্রতি ব্যবধান ৩৩ টাকা। এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারের সয়াবিনে ৩২ শতাংশ ও পাম তেলের দাম প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এতে পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নিচ্ছে।
সরেজমিনে গতকাল খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার ছিল নি¤œমুখী। এ বাজারের সঙ্গে বিশ্ববাজারের প্রতি ঘণ্টায় দর ওঠানামা করে। প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ২০০ টাকায়, যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ছয় হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি কমেছে ৬০০ টাকা, আর পাম অয়েল মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৭৫০ থেকে চার হাজার ৮২০ টাকায়। এর মধ্যে এস আলম ব্র্যান্ডের পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৭৫০ টাকায় এবং সিটি গ্রুপের পাম বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৭৮০ টাকায়, যা দু সপ্তাহ আগে ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, গত ১০ দিন খাতুনগঞ্জ এলাকার তেলের দাম পড়ছে। এছাড়া বাজারে তেলের সরবরাহ ব্যাপক। কোনো কোনো কোম্পানি বোতলজাত সয়াবিনে লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের দাম কমে যাওয়ায় দাম কমছে।
খাতুনগঞ্জে আরএম ট্রেডাসের্র স্বত্বাধিকারী শাহেদুল আলম বলেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম কমেছে। আমরাও তাই সমন্বয় করা দামে সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি করছি।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের দর উঠেছিল টনপ্রতি এক হাজার ৯৫০ ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে এই দর নেমে আসে টনপ্রতি এক হাজার ১১০ ডলারে। অর্থাৎ দেশের ডলার রেট বিবেচনায় লিটারপ্রতি দাম ১৪০ টাকা। এক বছরের দরপতন হয়েছে ৬১৫ ডলার বা ৩১ শতাংশ, যা ভোজ্যতেলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দরপতন। অপরদিকে সয়াবিনের চেয়ে বেশি কমেছে পাম তেলের দাম। মালয়েশিয়ার কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বুশরা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভসে গত ২৮ মে অপরিশোধিত পাম তেল বেচাকেনা হয় এক হাজার পাঁচ ডলার, যা এক মাস আগে ছিল ৯৭২ ডলার। আর গত এক বছরের ব্যবধানে পাম তেলের দর কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা বলেন, গত বছর সয়াবিন তেলের বার্ষিক গড় দাম আগের বছরের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বাড়ে। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ৮৩৮ থেকে এক হাজার ৩৮৫ ডলারে উন্নীত হয়। আর গত বছরে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এক হাজার ৯৬৫ ডলার ওঠে। আর এপ্রিলে তো দুই হাজার ১০০ ডলারের বেশি দাম উঠেছিল। যদিও জুনের শেষদিকে দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছিল। আর চলতি জুলাইয়ের দামের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এখন এক হাজার ৩২০ ডলার থেকে এক হাজার ৩৫০ ডলারে লেনদেন হচ্ছে। তখন দাম বাড়ার সর্বশেষ প্রভাবক হিসেবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বড় ভূমিকা পালন করেছে। আর চীন, ভারতসহ বড় ভোক্তাদেশগুলোর চাহিদা হ্রাস, তেল উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানিকারক দেশগুলোতে মজুত বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এমন দরপতন হচ্ছে।
বড় একটি ভোজ্যতেল আমদানিকারক গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, বন্দর দিয়ে এখন যেসব তেল আমদানি হচ্ছে, তার ঋণপত্র বিশ্ববাজারে চড়া দাম থাকার সময় খোলা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। সেইসব তেল দেশে আসতে দেড় মাস সময় লাগবে। হয়তো তখন দাম সমন্বয় করে বিক্রি করা হবে। তবে এখন দাম কমছে। বাজারে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। এখন বাজারের চাহিদা কম, কারণ ঈদ মৌসুম হওয়ায় সবার স্টক আছে। আশা করি ঈদে দাম বাড়বে না।
উল্লেখ্য, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর বিপরীতে বছরে আমদানি হয় ৩০ থেকে ৩৩ লাখ টন। এর মধ্যে পাম অয়েল ১৮ টন এবং সয়াবিন ১২ লাখ টন। এসব চাহিদার সিংহভাগ তেল সরবরাহ করে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, এস আলম গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপ।