গণতন্ত্রের সৌন্দর্যে ইমরানের বিদায়

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত নতুন পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইমরান খান। দেশটির অন্যসব প্রধানমন্ত্রীর মতো মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে গদিচ্যুত হলেও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননি তিনি। এমনকি গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিদায়ও নেন দেশটির শীর্ষ পদ থেকে।

৬৯ বছর বয়সী ইমরান খানের জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে। ১৯৯৬ সালে গড়েন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দল। রাজনৈতিক সাফল্য পেতে বছরের পর বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০১৮ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সে সময় প্রায় সবকিছু তার পক্ষে ছিল বলে মনে হয়েছিল। বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার হিসেবে ইমরান তার দেশে জাতীয় নায়ক বনে যান। নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ক্রিকেট মাঠের মতো পাকিস্তানের রাজনীতিতেও তাকে রক্ষাকর্তা মনে করা হয়েছিল।

পাকিস্তানে তিনি ‘স্বাধীন নীতি’ নিয়ে চলার চেষ্টা করেন। আর এটিই তার জন্য কাল হয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা এই নীতির বিরুদ্ধাচরণ করে বিরোধী দলগুলো ও তাদের বিদেশি মিত্ররা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে রাজনৈতিক প্রভাবের চেয়ে যোগ্যতাকে বেশি মূল্য দিয়েছিলেন তিনি, চেয়েছিলেন আমলাতন্ত্র ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগে সংস্কার আনতেও।

ক্যারিশম্যাটিক লিডার হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও বহিঃচাপে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির অবমূল্যায়ন হওয়া, দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি বেশ ঝুঁকিতে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হন সাধারণ মানুষ। এ সুযোগ কাজে লাগায় বিরোধী দলগুলো। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্টকে দিয়ে অ্যাসেম্বলি ভেঙেও রক্ষা পাননি তিনি। গত শনিবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ইমরান খান। ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি। তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দরকার ছিল ১৭২ ভোট। এর আগে গত বছর মার্চেও একবার অনাস্থা ভোট আনা হয় ইমরান খানের বিরুদ্ধে। তখন তিনি ১৭৮ ভোট পেয়েছিলেন, প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে যা ছয়টি বেশি ছিল।

তবে কোনোবারই ব্যক্তি ইমরানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেননি বিরোধীরা। ক্ষমতা হারালেও ইমরান শিগগির রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছে না। তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন নিন্মকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার, ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। আজ পদত্যাগ করতে পারেন ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের আইনপ্রণেতারা।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গতকাল এক টুইটে ইমরান খান বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। দেশের জনগণই সর্বদা তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিলেন। অর্থাৎ পাকিস্তানে আজ তার দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মুহাম্মদ কুরেশি কিংবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও রাজনৈতিক দেশের স্বার্থে সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন ইমরান খান। গণতান্ত্রিক পথে থেকেই ‘কল্যাণ’ পাকিস্তান গঠনে চেষ্টা করবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০