মো. জিল্লুর রহমান: ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হলেন কর্তৃত্ববাদী শাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চূর্ণ-বিচূর্ণ হলো তার দম্ভের অপশাসন এবং তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ তার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। তার আকস্মিক বিদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে কারফিউ ভেঙে উল্লাসে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। রাজপথে নেমে আসে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সায় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। এরপর নিজের শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তিনি হতে দেননি।
যে গণতন্ত্রকে মূলমন্ত্র ধরে একটি স্বাধীন দেশের জš§ হয়েছিল, সেই দেশে গত এক যুগে চালু হয়েছে, ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’, ‘সীমিত গণতন্ত্র’, ‘বেশি উন্নয়ন কম গণতন্ত্র’, ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’ প্রভৃতি আজব সব সেøাগান। ঠিক যেমন আইয়ুব খানের ‘বুনিয়াদি গণতন্ত্র’। সামরিক স্বৈরাচার আইয়ুব খান তার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার বয়ান হিসেবে উন্নয়নকে বেছে নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সময়ও উন্নয়নের নামে দেশে চালু হয় ভোটারবিহীন গণতন্ত্র। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে রাষ্ট্রের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেটি ভেঙে পড়েনি বা ধ্বংস হয়নি। হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন শোষণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ধ্বংস হয়ে খাদের কিনারে চলে যায়। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনের মতো রাষ্ট্রের হƒৎপিন্ড সমতুল্য প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে দলীয়করণ করা হয় যা সংস্কার করা অতীব জরুরি।
জাতীয় সংসদ দেশের আইন প্রণয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও তার মহাজোট ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাতের ভোট”নামে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পায় এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘ডামি গণতন্ত্র’ নামে পরিচিতি পায়। মূলত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভিন্ন মতাবলম্বী বিরোধীদের গায়েবি মামলা ও দলীয় দুর্বৃত্তদের হামলা দিয়ে এমন একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেন যাতে তারা নির্বাচনে আসতে না পারেন। তিনি পুলিশ দিয়ে বিরোধীদের মিছিল মিটিংয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন এবং তিনি একটি অনুগত গৃহপালিত বিরোধী দল সৃষ্টি করে বিতর্কিত সংসদ ব্যবস্থা চালু রাখেন।
বিচার বিভাগকে শেখ হাসিনা এমনভাবে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন যেখানে তার মতাদর্শের বিচার পাওয়া যায়। তিনি তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ ও দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য দলীয় ভাবাদর্শের বিচারপতিদের দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিচারের নামে প্রহসন”শুরু করেন। এসব আদালতে কোনো নিয়ম শৃঙ্খলার বালাই ছিল না। জোর করে অসত্য সাক্ষী প্রদান, বিরোধী সাক্ষীদের গুম, আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়া, মামলা চলাকালে আইনের ভূতাপেক্ষা সংশোধন, রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যাপক চাপ ইত্যাদি দেশে বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। এসব দলীয় বিবেচনায় নিয়োজিত বিচারপতিরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে পুনরায় নিয়োগ পেয়ে শেখ হাসিনার মতাদর্শের বিচার চালিয়ে যান। এমনকি একজন প্রধান বিচারপতি তার সরকারের মতের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করায় তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং শামসুদ্দীন চৌধুরী নামে একজন মানসিক অসংলগ্ন ব্যক্তিকে হাইকোর্ট ও পরবর্তী সময় আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তাছাড়া উচ্চ আদালতে দলীয় ভাবাদর্শের খুনি ফৌজদারি অপরাধের আসামিকেও বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের মতো নিম্ন আদালতও সরকারের ইশরা ইঙ্গিতে বিচার পরিচালিত হয় এবং পুরো বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও মানমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়।
বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু সেটাকে শেখ হাসিনা এমনভাবে দলীয়করণ করেন যদি একজন সাধারণ নাগরিক সচিবালয় বা সরকারি অফিসের সামনে দিয়ে ভ্রমণ করতেন, তার মনে হতো এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় বা অফিস। আমলাদের তিনি এমনভাবে প্রভাবিত করেন তাদের বক্তৃতা বিবৃতি পড়লে মনে হতো তারা তার দলীয় নেতা বা কর্মী। তিনি আমলাদের মধ্যে একটি তোষামোদি শ্রেণি তৈরি করেন এবং তাদেরকেই তিনি তার রাজনৈতিক অভিলাষ ব্যস্তবায়নের দায়িত্ব ন্যস্ত করতেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়, ক্ষমতা হারানোর শেষ সময়ে একজন পিয়নের বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।
শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে এমন একটি দলীয় দানব বাহিনীকে পরিণত করেন যেখানে দলীয় ক্যাডারদের পুনর্বাসন করে ১৫ বছরের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে মেতে উঠেছিলেন। আইনের শাসনের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ভিন্নমত পোষণকারীদের শায়েস্তা করার জন্য গায়েবি মামলা দিয়ে সারাদেশে একটি ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করেন। পুলিশের গায়েবি মামলা”সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও একটি আতঙ্কের নাম হয়ে উঠে। প্রবাসী, প্রতিবন্ধী, শিশু, বহু আগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিরাও এ থেকে রেহাই পায়নি। অন্যদিকে ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট মামলায় মানুষকে হয়রানি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জš§ দেয়। এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ, থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ সদস্যদের নির্বিচারে হত্যার মতো প্রতিশোধ। একইভাবে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকেও রাষ্ট্রীয় হত্যা, গুম প্রভৃতি অপকর্মে প্ররোচিত করেন এবং এক পর্যায়ে র্যাব ও এ বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে তার অনুগতদের নিয়োগ করে তার পাতানো নির্বাচনের খায়েশ পূর্ণ করেন এবং নির্বাচন কমিশনরা তার শেখানো বুলি আওড়াতে থাকেন। কাজী রকিবুদ্দিন কমিশন ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনকে বিনাভোটে নির্বাচিত করেন, কে এম নুরুল হুদা কমিশন দিনের ভোট রাতে
আয়োজন করেন এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ডামি ভোটের আয়োজন করে ইতিহাস বিখ্যাত হয়ে গেছেন! একইভাবে শেখ হাসিনা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আজ্ঞাবহ দলীয় আমলাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করেন এবং জনগণের করের টাকায় তথাকথিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শেখ হাসিনা তার কর্তৃত্ববাদী শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, বিনা ভোটের চর্চা রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে দেন। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পরিষদ, দেশের সর্বত্র বণিক সমিতির নির্বাচন, সাংবাদিক সমিতি, স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমিতিতে নিজের দলের লোকদের পুনর্বাসন করেন এবং সবাই দলীয় চেতনার নামে হরিলুট কারবারে নিয়োজিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিন্দুমাত্র বালাই ছিল না। যে বা যারাই এগুলোর প্রতিবাদ করেছে তাকেই তারা গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করে থামিয়ে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে দলীয় লোকজনকে অবাধে অর্থ পাচার এবং ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নামে বেনামে অর্থ লুট করার লাইসেন্স দিয়েছিল। শেখ আবদুল হাই বাচ্চু তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তার বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হরিলুটের অভিযোগ উঠলেও তার ১৫ বছরের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তার দলীয় দুর্বৃত্তদের ইশারা ইঙ্গিতে চলত এবং এ কারণে তার শাসনামলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রশান্ত কুমার হালদার (পি. কে. হালদার) ব্যাপক অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। বিস্ময়ের ব্যাপার প্রশান্ত কুমার হালদারের চেয়েও বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা শেখ হাসিনার আত্মীয় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। অভিযোগ আছে বেসিক ব্যাংকের অন্তত ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদক দায়ের করা ৫৬ মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। আবদুল হাই বাচ্চুকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত ১০ বছরেও শেষ করতে পারেনি দুদক। শুধু বেসিক ব্যাংকের আবদুল হাই বাচ্চু বা পি কে হালদার নয়, এ রকম জনতা ব্যাংকের অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও থারমেক্স গ্রুপের দুর্নীতি, সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থ লোপাটের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। এ ধরনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের অর্থ লোপাট করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ব্যাংক খাতকে নাজুক অবস্থায় পরিণত করেছে।
শেখ হাসিনা কিছু দলীয় অনুগত আমলাদের উপদেষ্টা বানিয়ে তার ক্ষমতার বলয় পাকাপোক্ত করেছিলেন। তার আত্মীয় তাকসিম এ খানকে ঢাকা ওয়াসা, প্রয়াত শামীম মোহাম্মদ আফজালকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইজারা দিয়েছিলেন। সরকারি কর্মকমিশন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে দলীয় আনুগত্যদের নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি এবং অনিয়মের এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করে হরিলুটের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছিলেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানে দলীয় তোষামোদির এক অপূর্ব সম্মিলন ঘটিয়ে তার রাষ্ট্রীয় অনাচারকে সিদ্ধ করার কৌশল বাস্তবায়ন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা স্বপদে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় এমন সব মিথ্যা কথা বলতেন যা ছিল অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার পর গণমাধ্যমের সামনে এমনভাবে অভিনয় করতেন যেন তার কী অপরাধ তা তিনি জানেন না! তার এসব অভিনয় ও মায়াকান্না জনগণের কাছে খুব সহজেই স্পষ্ট হয়ে য়ায় এবং জনগণ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তিনি কিছু অনুগত তোষামোদি সাংবাদিক শ্রেণির সামনে সংবাদ সম্মেলনের নামে বিষোদ্গার এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন। শেষ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদেরও একটি মাত্র শব্দ ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’Ñ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্টারের বিখ্যাত সেøাগান। সেই পোস্টারে দুই পাকিস্তানের তুলনায় দেখা যায়, রাজস্ব খাতে ব্যয়, উন্নয়ন খাতে ব্যয়, বৈদেশিক সাহায্য, বৈদেশিক আমদানি, কেন্দ্রীয় সরকার ও সামরিক বাহিনীর চাকরিতে পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। অন্যদিকে চাল, আটা, শর্ষের তেল আর সোনার দাম পূর্ব পাকিস্তানে ছিল কয়েক গুণ বেশি। অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা এর ভিত্তিতেই এই ভূখণ্ডকে ‘শ্মশান’ বলে মনে করেছিলেন। গণতন্ত্রের লেবাসধারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনাও শেষ পর্যন্ত ছাত্র জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে বাংলাদেশকে একটি শ্মশানে পরিণত করেছিলেন।
শেখ হাসিনা যেভাবে গণতান্ত্রিক নেত্রী থেকে স্বৈরশাসক হয়ে উঠেছিলেন, তাতে তার এমন পতন ছিল অনিবার্য। তিনি স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধীদের দমন, সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠরোধ এবং বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। পালিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন তার দল ও কর্মীদের এবং বিতর্কিত করেছেন দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পিতা বঙ্গবন্ধুর পাহাড়সম ইমেজ। তাছাড়া দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তার হাতে, যা কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে না; কিন্তু বাংলাদেশিরা তাকে ভুল প্রমাণ করেছেন, ক্ষমতা কারও জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়!