জনসাধারণকে দুর্ভোগে ফেলে গণপরিবহন মালিকরা সরকারের মাধ্যমে বাস ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছেন। আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৩৮ পয়সা। এ ছাড়া মহানগরে বাস ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে দুই টাকা ১৫ পয়সা অর্থাৎ ৪৫ পয়সা বাড়ানো হলো। এখন নতুন নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা একান্ত আবশ্যক।
ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণার পর গতকাল রোববার বিকাল থেকেই গণপরিবহন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাস মালিকরা। বাস ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকে দেশজুড়ে কয়েকদিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট চলে। তেল পরিবহন খাতের একমাত্র খরচ নয়। তেল ছাড়াও অন্তত ২১টি উপাদানবাবদ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলে গণপরিবহন মালিকরা গাড়ি চালনা বন্ধ করে দিয়েছেন সংঘবদ্ধভাবে।
খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ‘অনুরোধ’ করেছেন ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও গণপরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। সরকারের ‘অনুরোধে’ও কাজ না হওয়ায় ভাড়া পুনর্নির্ধারণে জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে। আপাতত দুর্ভোগের নিরসনে জনমনে স্বস্তি ফিরলেও গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্য আবারও সামনে এসেছে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা বললেও ধর্মঘট ডেকেছে। আবার বলা হচ্ছে, কে ধর্মঘট ডেকেছে? গ্যাসের দাম গত দুই বছরে না বাড়লেও সিএনজিচালিত বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে বাস বন্ধ কেন রেখেছেন, এ উত্তরও জানা নেই।
বাস পরিচালনায় ২২ খাতের খরচ ধরে ভাড়া নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু ২০১৯ সালে কমিটি যত ব্যয় ধরে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তা অতিরঞ্জিতই বটে। বাস পরিচালনায় এত ব্যয় হয় না। দূরপাল্লায় ৩০ শতাংশ ও নগর পরিবহনে ১০ শতাংশ আসন খালি ধরে ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাজধানীর বাসে আসন খালি দূরে থাকুক, বাদুড়ঝোলা করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। সারাদেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি হয়ে দাবি আদায় করে নেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি দুই বছর আগে দূরপাল্লা ও নগর পরিবহনে যে ভাড়া প্রস্তাব করেছিল, বাস মালিকরা এখন তার চেয়েও বেশি পেয়ে গেছেন।
রক্ষণাবেক্ষণে মালিকরা আদৌ কোনো ব্যয় করেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তারা যে ব্যয়ের কথা বলছেন, তা সঠিক হলে রাজধানীর সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি থাকার কথা নয়। অতিরঞ্জিত কিংবা মিথ্যা ব্যয় দেখিয়ে পরিবহন মালিকরা বারবার ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে তা যাচাই করে দেখাও হচ্ছে না। যত ভোগান্তি সাধারণ মানুষের! এখন বাস ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বাড়বে। ঈদের সময় আবার ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হয়। গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন থাকলে মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া আচরণ করতে পারত না। তারা আইন না মানলেও তাদের দাবিমতো ভাড়া বাড়ানো হওয়ায় তারা প্রশ্রয় পাবে। গণপরিবহনে অরাজকতা বন্ধে ব্যবস্থা নিলে জনদুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।