Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:31 pm

গণপরিবহন চালু হওয়ায় রাজধানীতে যানজট শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গণপরিবহন চালু করার প্রথম দিনে রাজধানীর সড়কে বাসের সংখ্যা খুব বেশি না থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহনসহ অন্য যানবাহনের সঙ্গে বাস যোগ হওয়ায় দেখা মিলেছে নিত্যকার যানজটের। মহামারি ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল মহানগর ও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।

সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা বাসগুলোয় যাত্রী ছিল কম। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোয় চালক, হেলপার ও যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।

শিয়া মসজিদ-বনশ্রী রুটের আলিফ পরিবহন বাসের চালক আবদুল্লাহ বলেন, ‘যাত্রী অহনও কম। আমাগো মাস্ক ছাড়া মানুষ উডাইতে মানা করছে। আমরা উডাইতেছি না। স্যানিটাইজারও রাখছি।’

দীপন পরিবহনের চালক মোশারফ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এখন আমরা বাস চালানোর সুযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাত্রী পরিবহন করছি এবং করব।’

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দুই সিটে একজন করে যাত্রী বসতে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি বাসে। সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকায় পরিবহনের চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন না।

গণপরিবহন চালু করার প্রথম দিনে আজিমপুর থেকে ঠিকানা পরিবহন, দেওয়ান পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে সরকারের দেয়া নির্দেশনা মানা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

মোহাম্মদপুরে আলিফ পরিবহনের যাত্রী আনিকা মিসকাত বলেন, ‘ভাড়া বেশি নিলেও বাস চলাচল শুরু হওয়ায় আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বিধি কতক্ষণ এরা মানবে, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’

মিরপুর দুয়ারিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ মার্কেট, আজিমপুর ও গুলিস্তানের উদ্দেশে আশীর্বাদ ও বিহঙ্গ বাস সার্ভিসকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়। সকালে যাত্রীসংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে। গণপরিবহন চালু হওয়ায় অন্যদিনের চেয়ে বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে সকাল ৯টায় রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা ও গুলশান সড়কে যানজট হয়।

গুলিস্তান থেকে গুলশানে আসা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জানতাম আজকে গণপরিবহন নামবে। সেজন্য সকাল সকাল বেরিয়েছি বাসা থেকে। কিন্তু যে অবস্থা দেখলাম, পথে পথে যানজট। আমার গুলশানে আসতেই পাক্কা এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে।’

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। বন্ধ করা হয় সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন। 

সম্প্রতি দোকানপাট, শপিং মল ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা। পরে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে মহানগর ও জেলায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

নির্দেশনায় বলা হয়, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কোনোভাবে মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না। যাত্রার শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। চালক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশও দেয়া হয় প্রজ্ঞাপনে।