মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ: গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে মিরপুরগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আসাদুজ্জামান পিয়াল। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাসের দেখা মেলেনি তার। চেষ্টা করেও উঠতে পারেননি একটি পিকআপ ভ্যানে। আর আকাশচুম্বী ভাড়া নিয়ে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা রূপ নিয়েছে রাজাদের পরিবহনে।
সে সময় দেখতে পান একজন বাইকার মিরপুর যাবেন বলে যাত্রী খুঁজছেন। পাশে গিয়ে ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই ওই বাইকার ভাড়া হাঁকান ৪০০ টাকা। এ কথা শুনে পিয়াল যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে কারওয়ান বাজার থেকে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত গেলে ভাড়া আসে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। সেই সঙ্গে ছাড় থাকলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাওয়া যায়; সেক্ষেত্রে ভাড়া আসে ১০০ থেকে ১১০ টাকা।
তাৎক্ষণিক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সেখানে কথা হয় পিয়ালের। তিনি বলেন, এটা কোন কথা, ওরা আমাদের বিপদের সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত যেতে হবে। এই দূরত্ব যেতে সিএনজিতে ৫০০ টাকা চাইছে। পরে অবশ্য এই প্রতিবেদকের সামনেই সেই বাইকে ২০০ টাকায় দফারফা করেন পিয়াল।
গত বৃহস্পতিবারও রাজধানীজুড়ে দেখা যায় এমন চিত্র। চাঁনখারপুল থেকে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে কাজলা-শনিরআখড়া-রায়েরবাগ এলাকায় যাত্রীদের আনা-নেওয়া করতে দেখা যায় কয়েকজন বাইকারকে। বাইকের পেছনে দুজন করে যাত্রী নেওয়া হয় আর ভাড়া রাখা হয় ৮০ টাকা করে। অথচ এ রুটে বাসের ভাড়া ১৫ টাকা। যাত্রীরাও দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত এসব বাইকে উঠছেন।
এভাবেই গত দুদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইকারদের যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলোর মোটরসাইকেলের চেয়ে কয়েকগুণ। তাদের অনেকেই আবার বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং কোম্পানির রাইডার। কিন্তু অ্যাপের চুক্তির চেয়ে ভাড়া বেশি পাওয়া যাচ্ছে আর কোম্পানিকে কমিশনও দেওয়া লাগছে না বলে এখন সরাসরি বাইক ভাড়াতেই আগ্রহী হচ্ছেন তারা। অনেক অপেশাদার বাইকারকেও দেখা গেছে চুক্তিতে যাত্রী তুলতে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শুক্রবার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে রাস্তায় বাস চলাচল না করায় সেই সুযোগ নিচ্ছেন অনেক বাইকার। তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া চাচ্ছেন আর নিরুপায় হয়ে সাধারণ মানুষও এতে উঠছে।
গতকাল রাজধানী ঘুরে রায়েরবাগ, গুলিস্তান, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, নিউমার্কেট এলাকায় বাইকাররা ডেকে ডেকে যাত্রী খুঁজছেন আর চুক্তিতে ভাড়া ঠিক করছেন। ভাড়া বেশি হলেও অনেকেই এসব বাইকে উঠছেন। শাহবাগ মোড়ে কথা হয় এমন একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বনানী যাব কিন্তু কোনো গাড়ি নেই। সিএনজিতে ২৫০ টাকা চাচ্ছে। তাই বাইকে উঠেছি ১২০ টাকায়। সেই বাইকের চালক বলেন, আমি তো একাই যাব, তাই ওনাকে নিয়ে গেলাম। আমারও কিছু টাকা আসছে, উনারও উপকার হচ্ছে। তাহলে ভাড়া এ তো বেশি নেওয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্যভাবে গেলেও তো আরও বেশি টাকা দিতে হতো।
আরেক যাত্রী রাসেল রহমান বলেন, মাস কেবল শুরু হলো। এখনও তো বেতন হয়নি। এর মধ্যে প্রতিদিন ২০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে যাতায়াত বাবদ। এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাইকার জানান, গত দুদিনে তিনি কম করে হলেও ৩০টি ট্রিপ মেরেছেন। এতে তার তিন হাজার টাকার মতো আয় হয়েছে। তিনি বলেন, রাস্তা ফাঁকা বলে খুবই কম সময়ে যাতায়াত করা গেছে। এছাড়া বাসায় বেকার বসে না থেকে কিছুটা আয় করে নেওয়া গেল।
কিন্তু অপেশাদার বাইকারদের এমন আচরণে মোটেও খুশি নন নগরবাসী। তারা বলছেন, এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়। অপেশাদারদের উচিত ব্যবসায়ী মনোভাব পোষণ না করে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করা। শামসুল আলম নামে একজন যাত্রী বলেন, সবাই যদি ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করে তাহলে কেমন হলো। অপেশাদার বাইকারও যদি পরিবহন শ্রমিকদের মতো বেশি টাকা আদায় করে, মানুষের ভোগান্তির সুযোগ নেয় তাহলে এদের আর শ্রমিকদের মধ্যে পার্থক্য থাকল কি।