গণপরিবহন বিষয়ে বিআরটিসির প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হোক

নগর পরিবহনের নির্দিষ্ট রুটে একক পরিরহন সংস্থা হিসেবে গণপরিবহন  পরিচালনা করতে চায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। সোমবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেছেন, বর্তমানে দুটি রুটে বিআরটিসির ২২টি বাস চললেও, মুনাফা করতে পারছেন না তারা। বিআরটিসি ছাড়াও আরও কয়েকটি কোম্পানির বাস চলাচল করে। অন্য কোম্পানির বাস নিয়ম না মেনে চলায় ক্ষতিতে রয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানের কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বক্তব্য না জেনে বিআরটিসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য তথ্যনির্ভর কি না, তা বলার সুযোগ নেই।  তবে কোনো রুটে একক পরিবহন সংস্থা হিসেবে বিআরটিসির গণপরিবহন  পরিচালনায় নাগরিক দুর্ভোগ কতটা কমবে, তাও তর্কসাপেক্ষ। এর আগে অনেক রুটেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গণপরিবহন পরিচালনা বরে ব্যর্থ হয়েছে বিআরটিসি। সংস্থাটির বহরে গাড়ি আছে অনেক; কিন্তু সেগুলো বেশিরভাগ সময়ই থাকে অচল। দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বিআরটিসির কোনো বাসই আয়ুষ্কাল পূর্ণ করতে পারে না। কেনার দু-চার বছরের মধ্যেই অচল হয়ে ডিপোয় স্থান করে নেয় সংস্থাটির বেশিরভাগ বাস। বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত গণপরিবহন যেখানে ১০-১৫ বছর রাস্তায় দাবড়ে চলে, সেখানে বিআরটিসির বাস রাস্তায় নামার দু-তিন বছরের মধ্যেই অচল হয়ে পড়ছে। অথচ বিআরটিসির রূপকল্প ও অভিলক্ষ্য হলো নিরাপদ ও আধুনিক রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে যাত্রী পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি, ডিপোর বহরে আধুনিক যানবাহন সংযোজন এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। অকেজো গণপরিবহন দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনসেবা দেবে; তা বোধগম্য নয়। বিআরটিসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সর্বাপেক্ষা উন্নত ও মানসম্পন্ন বাসই বহরে যুক্ত করা হয়। অথচ নিম্নমানের বাস সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ না করা, চালক-শ্রমিকদের অদক্ষতা ও অবহেলা এবং কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় আয়ুষ্কাল পেরোনোর আগেই বিআরটিসির বাসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের দৌরাত্ম্য থেকে সেবাগ্রহীতাদের রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়েই বিআরটিসির পথচলা। এখন নিজেই খুঁড়িয়ে চলছে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে। এটি ঠিক, নগর পরিবহনে চলা অন্য কোম্পানির বাস নিয়ম না মেনে চলছে না। কিন্তু  বিআরটিসির বাস নিয়ম মেনে চলছে, সে নিশ্চয়তা কে দেবে! সরকারি চাকরিজীবী বলে বিআরটিসির কর্মীদের আয় করার বাধ্যবাধকতা নেই। গাড়ি চলাচল না করলেও তারা বেতন পাবেন। তাই কোন পদ্ধতিতে নগরপরিবহন পরিচালনা করবে বিআরটিসি, সে বিষয়ে অংশীজন বিশেষ করে যাত্রীসাধারণের মতামত নেয়া দরকার। কেবল নিজেরা ‘যোগ্য’ দাবি করলেই তা কোনো রুটে একক পরিবহন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। কতক্ষণ পরপর গাড়ি ছাড়বে প্রভৃতি আনুষঙ্গিক বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, লাভজনক না হওয়ার পেছনে নিজেদেরই কারও যোগসাজশ রয়েছে। ফলে গাড়ি চলাচলই একসময় বন্ধ হয়ে যায়। তবে নিরবচ্ছিন্ন গণপরিবহন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান সাপেক্ষ পরীক্ষামূলকভাবে বিআরটিসির প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০