নজরুল ইসলাম: গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল হোসাইন। অবসরে গেছেন ২০০৫ সালে। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও উত্তরায় রয়েছে বাড়ি ও বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। গ্রামের বাড়ি রংপুর সদরেও প্লট ও বাড়ি রয়েছে। সব মিলিয়ে তার ৪০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধানে সেটিতে আরও বাড়তে পারে। তার বিরুদ্ধে এসব ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগ পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আসা অভিযোগটি আমলে নিয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।
জানা গেছে, তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোডে পাঁচ শতক জায়গায় পাঁচতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যার মূল্য ১৫ কোটি টাকা। মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির ২৩ নম্বর বাড়িতে দুই হাজার ৩০০ স্কয়ার ফুটের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার মূল্য দুই কোটি টাকা। উত্তরাতে পাঁচ শতক জায়গায় আশালতা নামের ৯ তলাবিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে, যার মূল্য ২০ কোটি টাকা। ব্যাংকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার মিলিয়ে আরও তিন কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি রংপুর সদরে প্লট ও বাড়ি রয়েছে। বাড়িভাড়া হিসেবে মাসে আট লাখ টাকার মতো পেয়ে থাকেন।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি ও রাজিয়া সুলতানা রোডে গিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ও তার বাড়িটির সত্যতা পাওয়া গেছে। রাজিয়া সুলতানা রোডের (কুমিল্লা হোল্ডিংস) বাড়িটি তার স্ত্রী আফরুজা জাহানের নামে। উত্তরার বাড়িটিরও সত্যতা পাওয়া গেছে। সেটিতে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে আবুল হোসাইনের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজিয়া সুলতানা রোড এলাকার এক বাসিন্দা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আবুল হোসাইনের এক ছেলে কানাডায় লেখাপড়া করে। আর দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি জাপান গার্ডেন সিটির অ্যাপার্টমেন্টটিতে থাকেন। জাপান গার্ডেনের নকশার (ডিজাইন) সময় প্লটটি তিনি কেনেন। তিনিও নকশা ইঞ্জিনিয়ার। উত্তরার বাড়িতে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। উত্তরার বাড়িটি ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয়। তার স্ত্রী কোনো চাকরি বা ব্যবসা করেন না। ছেলেও আয় করেন না। এক মেয়ে চিকিৎসক।’
জাপান গার্ডেন সিটির ২৩ নম্বর বাড়ির কয়েকজন জানান, আবুল হোসাইন সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখেন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও দেখা করেন না। পরিচয় দিতে চান না। একজন বলেন, ‘তার এত সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছে? তাকে দুদকে ধরিয়ে দেয়া দরকার।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘উত্তরার বাড়িটি আমার নয়। এটা বানানো (ডেভেলপার কোম্পানির তৈরি)। আমার একটা পয়সাও দেয়া লাগেনি। রাজিয়া সুলতানা রোডের বাড়িটি দুদক একবার চেক (অনুসন্ধান) করেছে। আমাকে পেপারও (পরিসমাপ্তি) দিয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়েও কাগজপত্র দেয়া রয়েছে।’ জানতে চাইলে দুদকের একজন পদস্থ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আবুল হোসাইন দাবি করেছেন, দুদকে তার নামে আগে অনুসন্ধান হয়েছে। তাকে পরিসমাপ্তির চিঠিও দেয়া হয়েছে। আমরা সেই চিঠি তাকে দুদকে দাখিল করতে বলেছি। আমাদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।’