নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর নয়াপল্টনে গত শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের সময় যেসব গণমাধ্যমের কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার ১৯টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে এই পরামর্শ দেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ৩১ জনের বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছেন। যেসব হাউসের সাংবাদিক হামলা, নির্যাতন ও নির্মমতার শিকার হয়েছেস, সেসব হাউস থেকে মামলা করা হয়েছে কি না, আমি জানি না। হয়তো দু-একটি হাউস করেছে, বাকিরা করেনি। মামলাটা হতে হবে।
‘আমার যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয়, সংশ্লিষ্ট হাউসের মামলা করতে হবে। আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই, বদ্ধপরিকর। কিন্তু কোনো একটা বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হলে প্রথমত মামলা লাগবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৮ অক্টোবর কার্যত রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা, আমার জানামতে আর কখনোই এই ঘটনা ঘটেনি। এর আগে প্রধান বিচারপতির এজলাসের দরজায় বিএনপি আইনজীবীরা লাথি মেরেছেন।’
‘এগুলো রাষ্ট্রের ওপর হামলা এবং রাষ্ট্রের ওপর হামলাকারীরা চিহ্নিত। তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। এটিকে যদি নিছক রাজনীতি বলে সেভাবে এটাকে ট্রিট করি, তাহলে এটা ভুল হবে, ঐতিহাসিকভাবে ভুল হবে এবং এটির দায় আমরা এড়াতে পারব না, আমরা সার্বিকভাবে দায় এড়াতে পারব না।’
এর আগে বৈঠকে সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা যেকোনো পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে তথ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
গত শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কাকরাইল, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ ও দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ এবং মারা গেছেন যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লা। এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অনেকেই।
গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা তথ্যমন্ত্রীকে জানান, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে আহত গণমাধ্যমকর্মীদের সমন্বিত তালিকা করা হবে।
বৈঠকে ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘সব ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব। সামনে নির্বাচন আছে, আমরা চাই নির্বিঘ্নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
‘আমরা মনে করি, এই নির্বাচনের প্রাক্কালে হয়তো আরও সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করার অপতৎপরতা হবে। সংকট ছিল না কিন্তু সংকট তৈরির অপতৎপরতা ও অপচেষ্টা আমরা ২৮ অক্টোবর দেখলাম।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি, আমরা যেন নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারি।’
ইকবাল সোবহান বলেন, ‘সাংবাদিকরা যখন এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির সংবাদ পরিবেশন করার জন্য দায়িত্ব পালন করতে যান, তখন তাদের ওপরে এ ধরনের আক্রমণকে আমরা মনে করি সংবাদপত্রের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে এক ধরনের আক্রমণ।’
আমাদের নতুন সময় এর ইমেরিটাস এডিটর নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘২৮ অক্টোবর এবং এরপর যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সমন্বিত তালিকা করে মানবাধিকার সংগঠনের কাছে এই পাঠানো হবে। প্রেসের ড্রেস পরে গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, সেই বিষয়টিও ডকুমেন্টেশনে থাকবে। যারা কাজ করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন সেই তথ্যও থাকবে।’
সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ করে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘আমরা এর পরেও কিন্তু ভয় পাব না। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব।’
‘আমাদের দাবি, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আমি সাংবাদিক হিসেবে গণতন্ত্রের বিকাশে কাজ করছি, আমাকে নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্র আমাকে দেবে, এটা আমাদের অধিকার।’
কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। যারা যে ধরনের কর্মসূচি পালন করুন না কেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তাটা যেন গুরুত্ব দেন, সেই আহ্বান জানাব।’
ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক ও জনগণকে মারার রাইটস কারও আছে? যারা মানবাধিকার নিয়ে কথায় কথায় এত প্রতিক্রিয়া দেন, আজকে এটার ভায়োলেশন কিনা আমরা তো বুঝতে পারছি না। তাই আমাদের তরফ থেকে ও সরকারের তরফ থেকে জোরালো বক্তব্য আসা উচিত।’ মিডিয়াকে টার্গেট করে আক্রমণ হয়েছে বলে দাবি করে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা এর প্রতিবাদও করেছি।
‘আমরা তিনটি দাবি দিয়ে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। সাংবাদিকদের ওপর হামলার জন্য বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ডেইলি পিপলস লাইফের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভোরের ডাকের সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন এবং বাংলাদেশ বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।