গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই

 

সরকার কয়েক দিন আগে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার পর আজ প্রথমবারের মতো দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে জাতীয়ভাবে। দিনটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘদিন থেকে দাবি ছিল বিভিন্ন মহলের। এর মধ্য দিয়ে তাদের দাবি যেমন পূরণ হলো, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতাও প্রমাণিত হলো আরেকবার। দিনটি উদ্যাপনের মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব অরক্ষিত বধ্যভূমি রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। এটা সমাজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন সুসংহত করবে, তেমনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার জন্য যে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা অবতীর্ণ হয়েছিলাম তার মূল বার্তাও পৌঁছানো সম্ভব হবে আগামী প্রজন্মের কাছে। মুক্তিযুদ্ধের মহান স্মৃতি প্রজন্মান্তরে ধরে রাখার জন্য উদ্যোগটি এখন নেওয়া দরকার।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর যে বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল, তা এখন সবার জানা। এ ধারা অব্যাহত থাকে পরবর্তী ৯ মাস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের হত্যাকাণ্ড থামায়নি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে, বিশেষত ডিসেম্বরে তারা বেছে বেছে হত্যা করে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের। বস্তুত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলেনি আজও। দিবসটিকে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা যথাযথ। আমরা চাইবো, এজন্য যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দরকার, সে ব্যাপারেও সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবে সরকার। চলতি বছর থেকেই ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় এ দিবস ঘিরে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মসূচি আয়োজনের উদ্যোগও প্রত্যাশা করি। বিশ্বে এখনও অনেকে আছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের ইতিহাস জানে না। এটা করা গেলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিশ্ববাসীকে জানানো সহজ হবে। একটি রাষ্ট্রের বিকাশ মূল্যায়নের জন্য তার জšে§র ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ। এ দিবস ঘিরে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে এটা জানানো গেলে বাংলাদেশকে তারা মূল্যায়ন করবে গুরুত্বসহকারে।

একাত্তরে গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তানি সেনাদের এ দেশীয় দোসরদের বিচার চলছে বাংলাদেশে। বেশ কয়েকজনের রায়ও কার্যকর হয়েছে এর মধ্যে। কিন্তু পাকিস্তানি যেসব সেনা এতে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি এখনও। এটা সম্পন্ন করতে দেশটির সরকার যাতে বাধ্য হয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ দরকার। বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে এ-বিষয়ক বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা যেভাবে করছে, সেটা প্রশংসনীয়। আমরা মনে করি, পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শোকাবহ স্মৃতি। এজন্য দ্বিপক্ষীয় কূটনীতিতেও আলোচ্য বিষয়বস্তুতে এটি থাকা চাই তালিকায় উপরের দিকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বে এ পর্যন্ত যত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশেরটি ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক। বিভিন্ন জাদুঘর, বই ও সংরক্ষণাগারে এর যেসব স্থির ও চলচ্চিত্র দেখা যায়, তা যে কোনো মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে বাধ্য। বস্তুত মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তে যে রক্তনদীর সূত্রপাত হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি প্রিয় স্বাধীনতা। তাদের রক্তের ঋণ শোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এখন একে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হলো তাদের ঘৃণ্য হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া; পাকিস্তানি বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের বিচার যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা। আমরা মনে-প্রাণে চাই, বিশ্বের আর কোনো দেশে এরকম গণহত্যা সংঘটিত না হোক; এর শিকার না হোক স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর কোনো জাতি। এটা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক উদ্যোগও প্রত্যাশা করি।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০