Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:05 am

গতি আসেনি চট্টগ্রাম বন্দরে, ইয়ার্ডে জমেছে ৪০ হাজার কনটেইনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: কোটা আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতার জেরে মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ হওয়া এবং ইন্টারনেট সেবা না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর ও অফডকে থাকা আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পাঁচ দিন পর গতকাল বুধবার সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাজে গত কয়েক দিনের চেয়ে কিছুটা গতিশীল হয়েছে। তবে স্বাভাবিক হয়নি আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন প্রক্রিয়া। একইভাবে বন্দর ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রমে তেমন গতি আসেনি। কারণ বন্দর শহর চট্টগ্রামের সব এলাকায় পুরোপুরি ইন্টারনেট চালু হয়নি। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুরোপুরি সেবা দিতে পারছে না।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন আমদানি ও রপ্তানির সকল পণ্য খালাস করতে পারছেন। কাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ম্যানুয়ালি পচনশীল মাল শুল্কায়ন করেছি। গতকাল বুধবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হওয়ায় সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টম হাউসে সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা হলো আমরা শিপিং এজেন্টদের থেকে ডিউ না পাওয়ায় পণ্য খালাস করতে পারছি না। তারা নাকি ইন্টারনেট পাচ্ছে না। এ বিষয়ে ইমাম গাজ্জালী বলেন, কারও পে-অর্ডার ও চালান না থাকলে আমরা অঙ্গীকারনামা নিয়ে পণ্য খালাস করতে দিচ্ছি।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের ১৯টি অফডকে রপ্তানি পণ্যবাহী প্রায় পাঁচ হাজার কন্টেইনার জমে আছে। এর পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানাগুলো থেকে নতুন কোনো রপ্তানি পণ্য গত কয়েক দিনে অফডকে আসেনি। অফডকগুলো থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন

টেইনার শিল্প-কারখানার পাঠানোর কাজও আটকে ছিল। বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর এম সোহায়েল বলেন, বন্দরের সব জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠা-নামার কাজ স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ডেলিভারিতে সমস্যা হয়ে যায়। সে কারণে বন্দরে থাকা কন্টেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ায় এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাস্টমসে কিছু পণ্যের শুল্কায়ন ম্যানুয়ালি করতে শুরু করায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

কিন্তু পুরো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে আরও এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। চেয়ারম্যান বলেন, শনি থেকে সোমবার ডেলিভারি কম হওয়ায় কনটেইনার জমে গিয়েছিল। এটা আরও বাড়লে হয়তো সমস্যা হতো। কিন্তু মহাসড়কে যানবাহন চলতে শুরু করায় মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বন্দরের ভেতরে সব কার্যক্রম, যেমনÑজাহাজ থেকে কনটেইনার লোড-আনলোড, জাহাজের আসা-যাওয়া সবই স্বাভাবিক ছিল এবং আছে। তবে ইন্টারনেট ডাউন থাকায় টার্মিনাল অপারেটিং ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে। এতে কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে।”

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এক দশক আগে পণ্যের শুল্কায়নে অনলাইনভিত্তিক অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থায় ঘরে বসে ব্যবসায়ীরা অনলাইনে আমদানি-রপ্তানির নথিপত্র জমা দিতেন। এরপর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কোটা আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন কোনো চালানের নথি জমা দিতে পারেননি ব্যবহারকারীরা। তাতে নতুন চালানের শুল্কায়নও বন্ধ ছিল।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সক্রিয় করা হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে এই ব্যবস্থায় শুল্কায়নের জন্য নথিপত্র জমা দিতে পারেন, সেজন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে চারটি কম্পিউটারে সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন করার সুযোগ ছিল। বিকল্প ব্যবস্থায় কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানির চালানের নথি তেমন একটা জমা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলমান শাটডাউনে মোট বিএল জমা পড়েছিল মাত্র তিন হাজার ৮২৩টি। আর গতকাল বেলা ১টা পর্যন্ত এক হাজার ৪৮৩টি বিল জমা পড়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কাস্টম হাউসে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার রপ্তানি চালান ও এক হাজার দুইশ’র মতো আমদানি চালান শুল্কায়ন হয়। যদিও এখন ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। আশা করছি, স্বাভাবিক সময়ের মতো কার্যক্রম চলবে। এদিকে সিঅ্যান্ডএফ কর্মীরা বলেন, অ্যাসাকুডা ব্যবস্থা চালু হলেও ব্যাংক সেবা পুরোপুরি চালু হয়নি। আর পরিবহন সংকটে এ ব্যবস্থার পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল দুপুরে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ৩৯ হাজার ৫০০ এককের অধিক কনটেইনার ছিল। তবে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো ও ওঠানো অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। গতকাল বেলা ১টায় পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা
বলেন, সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ২৫০ কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। সবকিছু চালু হলে ডেলিভারি আগের মতো স্বাভাবিক হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন সিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ডিপোগুলো থেকে তেমন কনটেইনার ডেলিভারি নেই। সারাদিন ৫৫০ রপ্তানি কনটেইনার বন্দর পাঠানো হয়েছে। আর ডিপোগুলো স্বাভাবিক সময়ে রপ্তানিযোগ্য কনটেইনার থাকে সাত হাজার থেকে আট হাজার একক কনটেইনার। সেখানে আছে মাত্র চার হাজার ৫০০ একক কনটেইনার। আর আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার আছে ৯ হাজার এবং খালী কনটেইনার আছে ৪৯ হাজার একক কনটেইনার।
চট্টগ্রাম মহানগর বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কিছু কিছু এলাকায় ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও সেøা ছিল। আবার ৩টার পর ব্যাংক বন্ধ এবং বিকাল ৫টা থেকে থেকে কারফিউ জারি থাকায় কোনো কাজ সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। এতে কর্মীরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন।