নিজস্ব প্রতিবেদক: গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি পসকো দাইয়ু করপোরেশন। গতকাল পেট্রোবাংলার সঙ্গে এসংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি সই করে কোম্পানিটি। দরপত্র ছাড়াই দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ আইন) ২০১০ মোতাবেক এই অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) স্বাক্ষর হয়েছে।
গতকাল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এমপি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত আন সং দু ও পসকো দাইয়ু করপোরেশনের সিইও ইয়াং সাং কিম।
জানা গেছে, বিদ–্যৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আইন ২০১০, অনুসারে গভীর সমুদ্রাঞ্চলে ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে সময় দাইয়ু করপোরেশনসহ স্টেট অয়েল নামে একটি কোম্পানি এতে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে স্টেট অয়েল পিছু হটলে দাইয়ু ৫ বছর মেয়াদে প্রস্তাব দাখিল করে। শেষ পর্যন্ত দাইয়ুর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রথম দুই বছর দ্বিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে পরিচালনা, তৃতীয় বছর ত্রিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে পরিচালনা এবং শেষ দুই বছরে কূপ খননের বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হয়। গত ডিসেম্বরে সরকারের অনুমোদনক্রমে চুক্তি অনুস্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার পিএসসি স্বাক্ষরের বিষয়ে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়। চুক্তির ফলে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সিসমিক সার্ভে শুরু করা যাবে। ২০১৯ সালের প্রথমদিকে সার্ভের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ ব্লকে তেল-গ্যাসের প্রাপ্যতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
প্রাথমিকভাবে এ চুক্তি ৫ বৎসরের জন্য, তবে তা আরও তিন বছর বৃদ্ধি করা যাবে। এ চুক্তির বলে সমুদ্রের ১২ নং ব্লকে ৩৫৬০ বর্গ কিলোমিটারে ১০০০ মিটার থেকে ২০০০ মিটার গভীরে দাইয়ু অনুসন্ধান করবে। ২ডি ও ৩ডি সিসমিক সার্ভে তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ করে চতুর্থ ও পঞ্চম বছরে কূপ খননে যাবে। তেলে ৬৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ ও গ্যাসে ৬০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ পেট্রোবাংলার প্রফিট শেয়ার থাকবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি, তা হলোÑ জরিপ, অনুসন্ধান, কূপ খনন ও এলএনজি আমদানি। তিনি অনুসন্ধান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি চাহিদা যথাসময়ে পূরণ করা হবে। এলএনজি আমদানি করা হয়েছে, এলপিজির ব্যবহার বাড়িয়ে উদ্বৃত্ত প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পে দেওয়া হবে। গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকের মধ্যে আজ একটি ব্লকে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বাকিগুলোতে অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। অগভীর সমুদ্রের ১১টি ব্লকের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টিতে কাজ চলছে, বাকিগুলোতে অনুসন্ধান চালানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। স্থলভাগে ১০৮টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জুলাই ২০১৮-এর মধ্যে ২৮টি কূপ খনন সম্পন্ন করা হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। সরকার যথাসময়ে সবার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এদিকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গতকাল দাইয়ুর সঙ্গে দরপত্র ছাড়াই চূড়ান্ত হলো। দরপত্র ছাড়া এ চুক্তি সইয়ে অনুসরণ করা হয়েছে দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ আইন) ২০১০। ফলে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা করতে হবে না সংশ্লিষ্টদের। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিশেষ আইনের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে।ইতোমধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে গ্যাস খাতে যেসব চুক্তি হয়েছে তা নিয়েই অনেক সমালোচনা আছে। কাজেই দরপত্র ছাড়া কাজ দেয়াটা আরও বেশি সমালোচনায় পড়তে পারে।