গম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন যশোর চৌগাছার চাষিরা

 

প্রতিনিধি, যশোর: যশোরের চৌগাছায় কৃষকরা আবারও আগ্রহী হয়ে উঠছেন গম আবাদে। ছত্রাকজনিত ‘ব্লাস্ট’ রোগ গম চাষ থেকে এ অঞ্চলের কৃষকদের অনেকটাই দূরে সরিয়ে দেয়। বলা চলে কৃষক গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কৃষককে আতঙ্কিত না হয়ে গম চাষে মনোনিবেশ করতে উপজেলা কৃষি অফিস নিরলসভাবে কাজ করে যান। বর্তমানে উপজেলায় ৩শ’ ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে গমের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ অঞ্চলের গমচাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম চাষ করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। ভালো ফলন ও বাজারমূল্য থাকায় লাভবান হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা। তবে হুইট ব্লাস্ট ভাইরাস একেবারে নির্মূল না হলেও চলতি মৌসুমে তার প্রভাব পড়েনি গম ক্ষেতে।

তিনি জানান, ২০১৯-২০ মৌসুমে একেবারে শূন্য থেকে ৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। ২০২০-২১ মৌসুমে ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। সে মৌসুমেও খুব ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। হুইট ব্লাস্টের দাপট কমলেও অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় এর প্রভাব। ২০২১-২২ মৌসুমে গম চাষে লাভের মুখ দেখেন কৃষকরা। ওই মৌসুমে ব্লাস্টের প্রভাব থাকলেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি গম ক্ষেতে। কিছুটা লাভের মুখ দেখা দেয়ায় ২০২২-২৩ মৌসুমে উপজেলায় ২শ ১০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়।

গেল বছর লাভের মুখ দেখা দেয়ায় ২০২৩-২৪ মৌসুমে উপজেলায় ৩শ ২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়, যা লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ১শ হেক্টর বেশি। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে অধিকাংশ কৃষকই কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাস্ট-প্রতিরোধী জাত বারি-৩০, ৩২ ও ৩৩ গম চাষ করেন। ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে গমের চাষ অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর গম চাষে আতঙ্ক ছাড়াই অধিক ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। বলা চলে গমের সুদিন ফিরেছে উপজেলায়। ফলন ও দামে খুশি উপজেলার গম চাষিরা। বাম্পার ফলনের আশা তাদের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগের কথা না শুনে যারা গম চাষ করেছিলেন তারা বারবার লোকসানের মুখে পড়েন। এক সময় তারাও এ চাষ থেকে সরে যান। ২০১৯-২০ মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি জাতের গমের আবাদ করে কিছুটা লোকসান কম হয় কৃষকদের।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২০২৪ মৌসুমেও লাভের মুখ দেখতে থাকেন উপজেলার গমচাষিরা। গত মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সেই জাতগুলোর গম চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হয়। ফলে চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। গম চাষে আবারও সুদিন ফিরছে এ উপজেলার চাষিদের।

উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জাকির হোসেন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে গম চাষ করে ৫৫ মণ গম পেয়েছেন। রোগবালাই কম থাকার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। তিনি এ বছর প্রায় ৯০ হাজার টাকায় গম বিক্রি করেছেন। বাজার দরেও তিনি খুশি। একই গ্রামের গমচাষি নুরুজ্জামান, হোসেন আলী, অমেদ আলী, হবিবর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর খুবই ভালো ফলন হয়েছে। আগের বছরগুলোয় গমে অনেক রোগ ছিল। কিন্তু এ বছর কোনো রোগ নেই। এলাকার সবার গম ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের বেশির ভাগ গম কাটে কৃষককে ঘরে উঠে গেছে।

গমের ব্লাস্ট রোগ ও গম চাষ সম্পর্কে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, যা মোট গম আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। গমের জাত ও বপনের সময়ভেদে রোগের মাত্রা এবং ফলনের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এ রোগের কারণে আক্রান্ত গমের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়।

যশোরের চৌগাছা এলাকাতেও ব্লাস্ট ভাইরাস দেখা দিলে কৃষকারা আতঙ্কিত হয়ে গম চাষ এক প্রকার ছেড়ে দেয়। ২০১৭-১৮ সালের দিকে উপজেলায় গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোঠায় চলে যায়। পরবর্তী সময়ে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের গম চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকেন। বর্তমানে চৌগাছায় আশানুরূপ গম চাষ শুরু হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কৃষি অফিস এ উপজেলার কৃষকদের সবসময় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, উপজেলার আবহাওয়া গমচাষের জন্য উপযোগী। আগামীতে গম চাষ আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০