গরমের তীব্রতায় বেড়েছে তালশাঁসের বিক্রি

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও:ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন বাজারে তালের শাঁসের কদর বেড়েছে। গরমে স্বস্তি পেতে প্রায় সবার পছন্দের তালিকায় রয়েছে কচি তালের শাঁস। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি সুস্বাদু হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

জানা যায়, প্রতি বছর এই সময়ে বাজারে বিক্রি হয় তালশাঁস। খেতে সুস্বাদু এই মৌসুমি ফলের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবে দেশের বিভিন্ন জেলায় তালের চাহিদা বেশি না থাকায় তাল ছোট থাকতেই শাঁস বিক্রির আশায় এগুলো ঠাকুরগাঁওসহ আশেপাশের জেলাগুলোয় নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। তালশাঁসের চাহিদা প্রচুর থাকায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী তা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। এ বছরও শহরের আমতলীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত এটি বিক্রি করা হয়।

তালশাঁস ব্যবসায়ী নাজিম হোসেন বলেন, ‘আমরা তিনজন বগুড়া জেলার আদমদীঘি থেকে এসেছি। আমরা বগুড়ায় প্রতি বছর তালের বাগান কিনে থাকি। বাগানে প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০টি তালগাছ থাকে। এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিয়ে বাগান চুক্তিভত্তিক কিনে তা থেকে তাল ছোট থাকতেই আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনুসারে বিক্রি করে থাকি।

বিক্রেতা নাজমুল হাসান বলেন, কয়েক দিন হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছি। প্রতিটি তাল ২৫ টাকা বিক্রি করছি। এছাড়া প্রতিটি তালশাঁস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তাল থেকে কমপেক্ষ তিনটি শ্বাস হয়। এছাড়া কেউ যদি বেশি পরিমাণে তাল বা তালশাঁস কেনেন, তাহলে কিছুটা কম টাকা নেয়া হয়।

অপর বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল বগুড়া থেকে আসার। আদমদীঘি ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি তালবাগান থেকে তাল কিনে এখানে বিক্রি করছি। পর্যাপ্ত বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে প্রচুর। প্রতিদিন তাল বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ছয়-সাতশ টাকা জনপ্রতি টেকে।

তালের আঁশ কিনতে আসা ক্রেতা শহরের টিকাপাড়া মহল্লার গৃহিণী পায়েল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে এটা পাওয়া যায়। খেতে অনেক সুস্বাদু ও ভালো লাগে। প্রতিটি তাল থেকে দু-চারটি আঁশ পাওয়া যাচ্ছে। বড় প্রতিটি তাল ২৫ টাকা দরে কিনেছি। দাম কিছুটা কম হলে আরও বেশি পরিমাণে নেয়া যেত।

পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর মহল্লার স্কুলছাত্রী মোহনা বলে, তালশাঁস আমার ও পরিবারের সবার খুব পছন্দের। প্রত্যেক তালের আঁটি গত বছর পাঁচ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল; কিন্তু এ বছর ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তালশ্বাসের উপকারিতার ব্যাপারে কথা হয় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফিরোজ জামান জুয়েলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি অনেক ভালো একটি জনপ্রিয় ফল। তালের শ্বাসেই রয়েছে এমন কিছু পুষ্টিগুণ, যা শরীরে খুবই উপকারী। তালশ্বাসে জলশূন্যতা দূর করতে সহায়তা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে, হাড়ের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া তালশ্বাসে রয়েছে ভিটিামিন এ, সি ও বি কমপ্লেক্স, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। সর্বোপরি ত্বক সুন্দর, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে নিয়ম করে তালের শ্বাস খাওয়া খুবই উপকারী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০