অন্তঃসত্ত্বা নারীরা একটু বেশি গরম অনুভব করেন। গরমকালে তাদের এ কষ্ট আরও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি স্পর্শকাতর, যা তাদের ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই গরমের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীর বিশেষ যতœ নেওয়া প্রয়োজন।
যা করণীয়: গরমে প্রচুর ঘাম হওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় মাথা ঘোরা, বমি-বমি ভাব, ঠোঁট-মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কম প্রস্রাব বা হলুদ প্রস্রাব হলে বুঝতে হবে শরীরে পানির ঘাটতি রয়েছে। এজন্য সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান জরুরি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে ফল ও ফলের রস পান করতে হবে। শসার মতো পানিপূর্ণ সবজি খেতে হবে বেশি। মসলাদার ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। বেশি লবণাক্ত খাবারও বাদ দিতে হবে। আলুর চিপস, কুকিজ, ওয়েফার ও পাস্তার মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরনের খাবার শরীরকে তৃষ্ণার্ত করে।
পোশাক: আরামদায়ক, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা প্রয়োজন। সুতি ও শরীরে বাতাস চলাচলে সহায়তা করে, এমন পোশাক পরতে হবে। সাদা বা প্যাস্টেল শেডের (হালকা রং) পোশাক উপযুক্ত। বেশি ঘামলে ঘাম মুছে পোশাক পরিবর্তন করতে হবে। ভেজা পোশাকে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। প্রতিদিন গোসল করাও দরকার।
সূর্যালোক: গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সরাসরি সূর্যালোকে বেশি সময় না থাকা ভালো। বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। অন্য সময় যদি সূর্যালোকে যেতেই হয়, তবে সানস্ক্রিন লোশন ও সানগ্লাস ব্যবহার করা দরকার। প্রয়োজনে ছাতা ও টুপি ব্যবহার করতে পারেন।
খাবার: অল্প অল্প করে একটু পরপর খেলে উপকার। এতে হবু মায়ের বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর বেশি চাপ পড়ে না। শরীরে অধিক তাপও উৎপাদিত হয় না। এ সময় ক্যালসিয়াম, আয়রন, আমিষ ও আয়োডিনযুক্ত খাবার প্রয়োজন। এসব পাওয়া যাবে ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদিতে। চা, কফি অর্থাৎ ক্যাফেইনজাতীয় খাবার তাপমাত্রা বাড়ায়। কাঁচা বা অর্ধসেদ্ধ খাবার একদমই চলবে না, কারণ এ ধরনের খাবারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবী জীবাণু থাকতে পারে।
ঘুম ও অন্যান্য: দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসলে পা একটু উঁচু করে বসতে হবে। এতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। দুপুরে খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট ঘুমানো উচিত। ঘুম ও বিশ্রাম হবু মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম ও প্রসবপূর্ব অন্যান্য ব্যায়াম হবু মা ও তার সন্তানের জন্য উপকারী। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।
অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম
বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব রোগ
আলোক হেলথকেয়ার লি., মিরপুর-১০, ঢাকা