যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা বিশাল অট্টালিকা আর লাখো মানুষের ভিড়ে রাজধানীতে একটু ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাওয়া ভার। যা আছে সেগুলো হয় হাজারো মানুষের ভিড়ে কোলাহলপূর্ণ, নতুবা ঘুরে বেড়ানোর অনুপযুক্ত। ফলে সবাই ঢাকার আশেপাশে একটু নিরিবিলি জায়গা খুঁজে থাকেন পরিবার কিংবা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। এমনই একটি স্থান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রাজধানীর মধ্যে। এটি হচ্ছে পূর্বাচল এলাকার সড়কঘেঁষে গড়ে ওঠা নীলা মার্কেট।
তিনশ ফুট সড়কটি এমনিতেই বেড়াতে যাওয়ার জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নীলা মার্কেট গড়ে ওঠায় ওই অঞ্চলের আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। মার্কেটটি আসলে কোনো স্থায়ী স্থাপনা নয়। অনেকগুলো ছাউনি দেওয়া দোকানের সমন্বয় এই নীলা মার্কেট। সাধারণ কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই পাওয়া যায় এখানে। এমনকি গ্রামে উৎপাদিত নানা ধরনের শাকসবজি, ডিমসহ অনেক কিছু বিক্রি হয় বাজারটিতে। বিক্রি করা হয় আশেপাশে বিভিন্ন নদী ও খালবিলের দেশি মাছও।
এ মার্কেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পণ্য হয়ে উঠেছে নানা ধরনের মিষ্টি। বালিশ, চমচম, রসগোল্লা, ছানা, সন্দেশ, লেংচা, রসমালাইসহ প্রচলিত সব ধরনের মিষ্টি এখানে পাওয়া যায়। এ মিষ্টির বিশেষত্ব হলো, এগুলো তৈরি করা দেখা যায়। এ গরম মিষ্টি চাইলে চেখেও দেখতে পারবেন। বাসাবাড়িতে নিয়ে আসার জন্য রয়েছে প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থাও। ঢাকার নামি মিষ্টান্নের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর তুলনায় নীলা মার্কেটের মিষ্টি বেশ সস্তাই বলা চলে।
শুধু তা-ই নয়, এ বাজারে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি হোটেলও গড়ে উঠেছে। এখানে নানা ধরনের দেশীয়, চাষের ও সামুদ্রিক মাছ ফ্রাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলেই যে কেউ তার স্বাদ নিতে পারবে। এছাড়া ছোট-বড় নানা ধরনের অনেক দোকান রয়েছে।
শুধু যে বাজারই রয়েছে এখানে, তা কিন্তু নয়। বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, ছোট ট্রেনসহ বিনোদনের কিছু ব্যবস্থা নীলা মার্কেটের পাশে রয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলা তুরাগ নদীতে ট্রলার কিংবা নৌকায় করে ঘুরেও বেড়াতে পারেন। তবে নদীর পানি দূষিত হওয়ায় পানিতে না নামাই ভালো। এছাড়া নদীর ধারঘেঁষে বেশ কিছু খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। এখানে বসে নানা পদের খাবার খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। নীলা মার্কেটের আশেপাশে খোলা জায়গা অনেক। এখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করার জন্য বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে বলা চলে। তবে বিকালের সময়টুকু এখানে কাটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়।
যেভাবে যাবেন
রাজধানীর অনেক স্থান থেকে নীলা মার্কেট, তিনশ ফুট এলাকায় যাওয়ার কোনো সরাসরি যানবাহন নেই। তবে কয়েক ভাগে খুব সহজে সেখানে যাওয়া যাবে। প্রথমে যেকোনো স্থান থেকে কুড়িল-বিশ্বরোড যেতে হবে। সেখানে রেলগেট এলাকায় রিকশা পাবেন। বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত রিকশার ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া রেলগেট থেকে রিজার্ভ করা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়েও সরাসরি যেতে পারেন। তবে ভাড়া পড়বে বেশি।
বসুন্ধরা গেট থেকে অটোরিকশা ও ইঞ্জিনচালিত রিকশা পাওয়া যায়। অটোরিকশায় গেলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা। ইঞ্জিনের রিকশায় গেলে ভাড়া বেশি পড়বে। এজন্য চুক্তি করে যাওয়া ভালো। বসুন্ধরা গেট থেকে নীলা মার্কেট যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগতে পারে। এছাড়া কুড়িল-বিশ্বরোড রেলগেটের কাছাকাছি বিআরটিসির বাস পাওয়া যাবে। মোটরসাইকেল কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই সেখানে সহজে যেতে পারবেন। তিনশ ফুট এলাকা বেশ ফাঁকা। এখানে দ্রুতগামি গাড়ি চলাচল করে। তাই সচেতন ও সাবধান থাকা জরুরি। একইভাবে ফিরে আসুন নীলা মার্কেট থেকে।
তৌহিদুর রহমান