কোরবানির ঈদে মুসলমানদের ঘরে ঘরে গরু-ছাগলের মাংস খাওয়ার ধুম পড়ে। অনেকের ধারণা, গরুর মাংস ক্ষতিকর খাবার, তাই এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে এটি কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সঠিক তথ্য হলো, গরুর মাংসের অনেক উপকারী দিকও আছে। পরিমিত পরিমাণে সঠিকভাবে গরুর মাংস খেলে যে পরিমাণ পুষ্টি মেলে, তা সমপরিমাণ অন্য খাবার থেকে পাওয়া দুষ্কর। তবে পরিমিত খাওয়া চাই।
কতটুকু খাবেন: দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো তিন আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। এই পরিমাণ মাংস খেলে দৈনিক ক্যালরির চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ মিলবে (তিন আউন্স মাংসে আছে ২০০ ক্যালরি এবং দৈনিক চাহিদা দুই হাজার ক্যালরি)।
চর্বি ছাড়া মাংস খান: গরুর মাংস চর্বি ছাড়া ও চর্বিসহ দুভাবেই পাওয়া যায়। গরুর শরীরের দুটি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হলো পেছনের রানের ওপরের ফোলা অংশের মাংস, যাকে রাউন্ড বলা হয়। অন্যটি পেছনের দিকের ওপরের অংশের মাংস, যাকে সেরলয়েন বলা হয়। তবে মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে, সেগুলো রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা: ৮৫ গ্রাম সেরলয়েন অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৪৭ মিলিগ্রাম এবং ৮৫ গ্রাম রাউন্ড অঞ্চলের মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫৩ মিলিগ্রাম। কোনো সুস্থ মানুষের কোলেস্টেরলের দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩০০ মিলিগ্রাম এবং হƒদরোগীর জন্য ২০০ মিলিগ্রাম। সুতরাং ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নিচে।
পুষ্টিমান: শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে। এগুলো হলো প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন ও রিবোফ্লাভিন।
প্রোটিন পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে, জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়, আয়রন পেশিগুলোয় অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে এবং ভিটামিন বি১২ খাদ্য থেকে শক্তি জোগান দেয়।
তুলনা: ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস থেকে যে পরিমাণ জিংক মেলে, সেই পরিমাণ জিংক পেতে খেতে হবে ৮৫ গ্রাম ওজনের ১১ টুকরা টুনা মাছ। এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৮৫ গ্রাম ওজনের সাত টুকরা মুরগির বুকের মাংস। এই পরিমাণ রিবোফ্লাভিনের জন্য খেতে হবে ৮৫ গ্রাম ওজনের আড়াই টুকরা মুরগির বুকের মাংস। এই পরিমাণ থায়ামিনের জন্য খেতে হবে ৮৫ গ্রাম ওজনের দুই টুকরা মুরগির বুকের মাংস। [বাকি অংশ আগামী কাল]
সাজেদা কাশেম জ্যোতি
পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, বারডেম