শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ: গো-খাদ্যের উচ্চদাম ও দুধের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের খামারিরা। মহামারির শুরু থেকে বেড়ে চলেছে গো-খাদ্যের দাম। এতে দিশাহারা খামারিরা। দুধ ও গরু বিক্রি বিক্রি করে খরচ উঠছে না বলে খামারিরা জানিয়েছেন।
অপর দিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দেয়ায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি। বাঁধটি কেটে দেয়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা,
পাবনার চাটমোহর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও বড়াই গ্রাম উপজেলাসহ চলনবিল অঞ্চলের কমপক্ষে আটটি উপজলোর বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার নেপিয়ার ঘাস পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
খামারিদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা শাহজাদপুরে বাঘাবাড়িতে নির্মাণ করা হয়। এ মিল্কভিটাকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠে হাজার গরুর খামার। বর্তমানে এ অঞ্চলে আট শতাধিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রাথমিক সমিতির দেড় লক্ষাধিকসহ প্রায় দুই লাখ গবাদি পশু প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকে।
উৎপাদিত এ দুধের প্রায় এক লাখ লিটার দুধ মিল্কভিটা ও ৫০ হাজার লিটার দুধ অন্যান্য বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি সংগ্রহ করে থাকে। অবশিষ্ট প্রায় দুই লাখ লিটার দুধ সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার দোকান, মিষ্টি জাতীয় খাবার উৎপাদনকারী ও স্থানীয় বাজারগুলোয় বিক্রি করেন খামারিরা।
খামারিরা বলেন, ৯০০ টাকার ভূসির দাম এখন ১৩০০ টাকা। ৭০০ টাকার খেসারি ভূসি ১২০০, ৮০০ টাকার মসুর ভূসি ১৩০০ ও ২৫০০ টাকার তিলের খৈলের দাম ৪৫০০ টাকা। প্রতিনিয়ত গো-খাদ্যের মূল্য বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।
চলতি মাসে শাহজাদপুরের পোতাজিয়া ইউনিয়নের দুই কোটি টাকার রাওতারা সøুইস গেটসংলগ্ন লিংক বাঁধ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ কারণে সিরাজগঞ্জসহ তিন জেলার চলনবিল অঞ্চলের অন্তত ৯ উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কাঁচা ঘাস বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। একদিকে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে উৎপাদিত দুধের মূল্য কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে গো-খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সিরাজগঞ্জকে দুধের রাজধানী বলা হয়। এখানে বছরে আট থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়। প্রতিদিন ২০ থেকে ২১ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এর বেশিরভাগ প্রাণ ও আড়ংসহ বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করে। বাকি দুধ বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ও সাধারণ মানুষ কেনেন। মহামারির কারণে দুধের দাম কিছুটা কমেছে। খামারিদের দুধ বিক্রি করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ বিভাগ অবগত।
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে ইতোমধ্যে সাত হাজার ৯০০ খামারিকে তিন কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। যে সব খামারি অনুদান পাননি তাদের দ্বিতীয় ধাপে অনুদান দেয়া হবে।