যাদের করোনার টিকার দুই ডোজ নেয়ার পর ৬ মাস পেরিয়ে গেছে, তারা এখন বুস্টার ডোজ নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা ইতোমধ্যে টিকা নিয়ে ফেলেছেন কিন্তু এই মুহূর্তে অন্তঃসত্ত্বা, তারা বুস্টার ডোজ নেবেন, না অপেক্ষা করবেন?
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য করোনার টিকা গ্রহণ করা জরুরি। কারণ, করোনা সংক্রমণের ফলে ভ্রƒণের বিকাশে ঝুঁকি বাড়ে। প্রমাণিত হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন বেশি হয়; এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও আছে। গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুর জš§ বা প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়ে। করোনা থেকে সুরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা গ্রহণ করা।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, করোনার টিকা অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর। সেই সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে গর্ভধারণের আশা রাখেন, তাদের জন্যও টিকা গ্রহণ জরুরি।
সিডিসি, আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকলজিস্টস (এসিওজি) এবং সোসাইটি ফর ম্যাটারনাল ফেটাল মেডিসিন (এসএমএফএম) এখন সুপারিশ করছে, ১৬ বছর ও এর বেশি বয়সী যারা ইতোমধ্যে ইমিউনাইজড হয়েছেন, মানে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন। সিডিসির সর্বশেষ নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ১৬ বছর ও এর বেশি বয়সী প্রত্যেকেই তাদের দ্বিতীয় ডোজের ছয় মাস বা তার বেশি সময় পর ফাইজার-বায়োএনটেক অথবা মডার্না টিকার তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করবেন। যেকোনো ধরনের করোনার টিকা গ্রহণকারীই বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন। বুস্টারে একই ধরনের বা অন্য যেকোনো ধরনের টিকা গ্রহণ করা যাবে, এতে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি বেশি তৈরি হয় বলে ধারণা করা হয়।
দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও করোনা থেকে সুরক্ষার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করতে পারে। এ জন্য সিডিসি অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য একটি বুস্টার ডোজ অনুমোদন করেছে। গর্ভাবস্থায় বুস্টার ডোজ অতিরিক্ত সুরক্ষা দেবে এবং এটি প্রসব-পরবর্তী প্রাথমিক সময়ে প্রসূতিকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করতে পারে। কারণ, সন্তান প্রসবের পর অন্তত ৪২ দিন প্রসূতির জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা তাদের টিকা নেয়া মায়েদের জরায়ু থেকে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি দিয়ে উপকৃত হতে পারে; যা জন্মের পর প্রসারিত হয়। তাই বুস্টার ডোজ শুধু অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন নিরাপদ রাখে না; এটি জন্মের পর তার জন্য অতিরিক্ত সুবিধাও প্রদান করতে পারে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ