শীতকালীন নানা ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। এর বর্ণে রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। এ কারণে এর সৌন্দর্যেও রয়েছে ভিন্নতা। বাঙালির যে কোনো অনুষ্ঠানে গাঁদা ফুলের প্রয়োজন পড়ে। তাই এর বেশ চাহিদা রয়েছে। সারা বছর চাষ করা গেলেও শীতকালে ফলন ভালো হয়। পুরো শীতজুড়ে এ ফুলের দেখা মেলে। ফুলটির চাষাবাদ দেখে নিতে পারেন:
জাত
প্রায় সারা দেশেই গাঁদা ফুলের চাষ চোখে পড়ে। যশোরের গদখালী, ঝিনাইদহ, গাজীপুর; ঢাকার সাভার প্রভৃতি স্থানে তুলনামূলক বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে বেশ কয়েক জাতের গাঁদা পাওয়া যায়। চায়নিজ, রাজগাঁদা, আফ্রিকান ও ফরাসি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শেষের দুই জাতের চাষ হয় বেশি।
রংভেদে গাঁদার জাত হচ্ছে হলুদ, লাল, কমলা, গাঢ় খয়েরি, লাল-হলুদের মিশ্রণ প্রভৃতি। আফ্রিকান জাতের গাছ সোজা প্রকৃতির। এটি ৩০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর ফুল কমলা, হলুদ ও গাঢ় খয়েরি রঙের ছিটা দাগযুক্ত হয়।
ফরাসি গাঁদার গাছ খাট, ঝোপালো ও ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর ফুল আকারে ছোট কিন্তু ফুল ধরে তুলনামূলক বেশি। রং লাল।
কমলা রঙের গাঁদা ফুলের গাছ খুব শক্ত হয়। এর শাখা-প্রশাখা বেশি হওয়ায় ফুল বেশি ধরে। অনেক দিন পর্যন্ত এ গাছে ফুল ধরে। এ গাছ রোগ সহনশীল।
চারা তৈরি
শাখা কলম ও বীজের মাধ্যমে গাঁদার চারা তৈরি করা হয়। নভেম্বরে বীজতলায় বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করতে হয়। শাখা দিয়ে কলম করার জন্য গাঁদা গাছের শাখা আট থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা করে কেটে নিতে হয়। বীজতলায় শাখা ডালের টুকরো রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পাতা গজায়।
জমি নির্বাচন ও তৈরি
উঁচু, সুনিষ্কাশিত দোআঁশ ও উর্বর মাটি গাঁদা চাষের উপযোগী। চার-পাঁচবার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। টব বা পাত্রে চাষ করলে তিন ভাগ দোআঁশ এঁটেল বা দোআঁশ মাটির সঙ্গে এক ভাগ গোবর মিশিয়ে সার মাটির মিশ্রণ তৈরি করে চাষ করা যেতে পারে। প্রতি শতক জমিতে পচা গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে আরও একবার চাষ দিয়ে উপযুক্ত করে নিতে হবে।
চারা রোপণ
বীজ অথবা শাখা থেকে তৈরি এক মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়। এর উপযুক্ত সময় হচ্ছে অগ্রহায়ণ-পৌষ। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার হতে হবে। চারা উৎপাদন না করে সরাসরি বীজ থেকেও গাঁদা চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতি শতকে পাঁচ থেকে ছয় গ্রাম বীজ জমিতে বপন করতে হয়।
পরিচর্যা
রোপণের পর সেচ দিতে হবে। গাছের গোড়ায় পানি জমলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা জš§ালে নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গাঁদা ফুলে রোগবালাই তেমন হয় না। তবে মাঝেমধ্যে জাব পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সময় কৃষি দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অন্য ফসলের মতো একাধিকবার কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে না। গাছ বড় হলে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিলে গাছ সোজা থাকে। এতে ফুলের গুণগত মান ভালো হয়। গাছে ফুলের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল আসার এক মাস আগে গাছের ডগা ভেঙে দিতে হবে। একটি শাখায় ঘন হয়ে অনেক ফুল বা কুঁড়ি ধরলে ওপরের একটি বা দুটি রেখে বাকিগুলো ভেঙে দিতে হবে। চারা রোপণের ১৫ দিন পর ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা মারা গেলে মরা চারা তুলে ফেলতে হবে। এছাড়া চারা ঘন হলে পাতলা করে দেওয়া উচিত।
ফুল সংগ্রহ
চারা রোপণের ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফুল সংগ্রহ করা যায়। ফুল কাঁচি বা বেøড দিয়ে বোঁটাসহ কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খুব ভোরে ফুল তুলতে হয়। গড়ে একটি গাছে জাতভেদে ১৫ থেকে ৩০টি ফুল ধরে।
হ কৃষি-কৃষ্টি ডেস্ক