গাংনীতে তৎপরতার মধ্যেও থেমে নেই মাদক পাচার

প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর):প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই মেহেরপুরের গাংনী সীমান্তে মাদক পাচার। গাংনী উপজেলার কাথুলী-কাজিপুর সীমান্তে দেদার চলছে মাদক পাচার ও ক্রয়-বিক্রয়। র‌্যাব পুলিশ ও বিজিবি মাঝে মধ্যে মাদক দ্রব্য উদ্ধার কয়েকজনকে আটক করলেও এটি বৃহৎ চালানের একটা ক্ষুদ্র অংশ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে মাদক উদ্ধার ও মাদক পাচারকারীদের আটকের চেষ্টাকালে মাদক পাচারকারীদের হামলায় এক র‌্যাব সদস্য ও পুলিশকে আহত করে মাদক পাচারকারীদের পলায়নের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে প্রশাসন বলছে, মাদক নির্মূলে সব সময় তৎপর তারা।

জানা যায়, গত ৩০ মে র‌্যাব-১২ গাংনী ক্যাম্পের সদস্যরা মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম, সুজন, ভুট্টো ও সহড়াতলার মিলন সাইদ ওরফে সুইট হামলা চালিয়ে এসআই উত্তম কুমারকে মারাত্মক জখম করে। এ সময় র‌্যাব ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটক হয় সুইট। আহত র‌্যাব সদস্য ও মাদক পাচারকারীকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামে মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে মাদক পাচারকারীরা তাদের ব্যবহƒত মোটরসাইকেল দিয়ে পুলিশের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে আহত হয় কনস্টেবল তানভীর ও কনস্টেবল তোহিদ। আহতদের কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কনস্টেবল তানভীর হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত এলাকার কয়েকজন মাদকসেবী ও ছোটখাটো ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হলেও মূল পাচারকারীরা বরাবরই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সালামের প্রথম স্ত্রী বুলুয়ারা জানান, মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আত্মগোপন করেছে সালাম। মাদক ব্যবসার কারণে প্রথম স্ত্রী বুলুয়ারা তাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলে বউকে নিয়ে আলাদা বসবাস করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে মাদকের পাচার ও সহজলভ্যতার কারণে গাংনীতে বেড়েছে মাদকসেবীদের সংখ্যা। তারা হরেক কিসিমের নেশা করে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। মাদকের টাকার জোগান দিতে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই কাজে লিপ্ত হচ্ছে তারা। মেয়েরাও মাদকের নেশা থেকে পিছিয়ে নেই। তবে তারা গোপনে চিকিৎসা নেয়ায় কেউ জানতে পারে না। অসৎ সঙ্গ উচ্চাভিলাষী জীবন যাত্রা চরিতার্থ, বেকারত্ব সাংসারিক অভাব অনটন, প্রেমে ব্যর্থতার কারণে মাদকাসক্ত হচ্ছে যুব সমাজ।

সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচারকারীদের আটক ও মাদক উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশ ও র‌্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির প্রতি আস্থা হারিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা। মে মাসে গাংনী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও চোরাচালানবিরোধী সভায় বিরূপ মন্তব্য করেছেন এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। বিজিবি সীমান্ত এলাকায় মাদক উদ্ধার করলেও কোনো পাচারকারীকে আটক করতে পারেনি। গত ছয় মাসে ৩০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার হলেও কোনো পাচারকারীকে আটক করতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজিবি। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অবহেলায় মাদক পাচার হচ্ছে এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সিংহভাগ লোকই পাচার কাজে জড়িত বলে দাবি করেছেন এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তবে বিজিবি প্রতিনিধি কোনো জবাব দিতে পারেননি।

গাংনী থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানান, চলমান অভিযানে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সেবীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপন করলেও তাদের খুঁজে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কারা তাদের ব্যবসা দেখভাল করছে এবং মাদক বহন করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০