মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): মেহেরপুরের গাংনীতে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে তাপমাত্রার পারদ কমে গিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরলেও বৃষ্টির অজুুহাতে সবজির দাম বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। চার দিনের ব্যবধানে বেগুন, পটোল, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শসার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আর তাতেই পকেট কাটা পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া। প্রশাসনিক তদারকির অভাবে সিন্ডিকেট করে তারা ইচ্ছামতো বাজারদর নির্ধারণ করে থাকেন। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ায় চাষিদের উৎপাদন কমে গেছে। তাই কৃষক পর্যায়ে দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে পরিবহন ও আড়ত খরচ যোগ করেই খুচরা বিক্রি করতে হয়। তবে কৃষকরা বলছেন অন্যকথা। তাদের মতে, বৃষ্টির কারণে সবজি সংগ্রহ কমে গেছে এটা ঠিক। তবে আড়তের চেয়ে দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধির কথা নয়।
শুক্রবার বাণিজ্যিক শহর বামন্দী সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুনের বতর্মান বাজার চলছে ৮০ টাকা করে, যা তিনদিন আগে ছিল ৩৫ টাকা করে, শসা চলছে ৮০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চলছে ১২০ টাকা করে, যা আগে ছিল ৫০ টাকা করে, এক পিস লাউ বতর্মানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে, যা আগে ছিল ৩০ টাকা করে, আর উচ্ছে চলছে ১২০ টাকা করে, যা আগে ছিল ৬০ টাকা করে। প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে, যা তিনদিন আগে ছিল ৩০ টাকা। ঝিঙে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় যা আগে ছিল ৪০ টাকা করে। ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা আগে ছিল ৩৫ টাকা করে।
সবজি চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, মাঠ পর্যায়ে সবজি সংগ্রহ একটু কম হলেও আড়তে বিক্রি হচ্ছে কম দামে। শুক্রবার আড়তে বেগুন প্রতি কেজি ২৩ থেকে ২৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫৫ টাকা, এক পিস লাউ ৩০ টাকা আর উচ্ছে বিক্রি করেছেন ৬০ টাকা, প্রতি কেজি পটোল ২৫ টাকা, ঝিঙে প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ২৮ টাকা করে দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ বাজরে কয়েক হাত বদল হয়ে দাম বেড়েছে দুই তিন গুণ।
সবজি ক্রেতা ইব্রাহিম জানান, বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির দাম। বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার ধুঁয়া তুলে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছেন। যে টাকা পকেটে নিয়ে বাজারে আসা হয়েছে তা দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় একেবারই কম সবজি কিনতে হবে। তিনি আরও জানান, বাজারে যে মরিচ কৃষকের কাছ থেকে আড়তে কিনছে ১৫০ টাকা সেই মরিচ খুচরা কিনতে হচ্ছে আড়াইশ’ টাকায়।
স্কুলশিক্ষক পলাশ আহমেদ জানান, শুক্রবার ছুটির দিনে সবাই বাজার করতে আসেন। এ সুযোগ বিক্রেতারা কাজে লাগান। তার ওপর বৃষ্টির অজুহাত। প্রত্যেকটি সবজিতে দু’এক টাকা বেশি হলে ক্রেতাদের তেমন কোনো সমস্যা হতো না কিন্তু কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে ক্রেতা সাধারণকে এমনিভাবে ভুগতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সবজি বিক্রেতা জাফর আলী জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজি আমদানি কমে গেছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে আমদানি কমে যাওয়াই বেড়েজে সবজির দাম। এমন আবহওয়া চলতে থাকলে সবজির দাম আরো বাড়বে। একই কথা জানালেন সবজি বিক্রেতা মখলেচ। তিনি জানান, বৈরী আবহাওয়া সেই সঙ্গে সবজি ক্ষেতে জলাবদ্ধতার কারণে বাজারে অল্প সংখ্যক সবজি আমদানি হচ্ছে। যার ফলে দাম বেড়েছে।
মেহেরপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সজল আহমেদ জানান, ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে বাজার পরিস্থিতি অস্থির করার চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া বাজার মনিটরিংয়ে ভোক্তা অধিকার সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।