গাংনীতে বাঁধাকপি চাষিদের মাথায় হাত

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর):মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সবজি গ্রামখ্যাত সাহারবাটি গ্রামের কপি চাষি আজমাইন। তিনি নিজের দুই বিঘা জমি ছাড়াও এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে আগাম জাতের বাঁধাকপি চাষ করেছেন। চাষাবাদে অন্তত লাখ টাকা খরচ হয়। ক্ষেতে চারা গজালেও অদ্যাবধি কোনো পাতা বাঁধেনি। আশা ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করবেন। কিন্তু বিধি বাম। জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। কপি ক্ষেত বড় হলেও পাতা বাঁধেনি। এতে বড় অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়েছে তার। শুধু আজমাইন নয়, তার মতে গাংনী ও মুজিবনগর এলাকার সাড়ে তিনশ’ চাষি এই ক্ষতির সম্মুখীন। তবে কৃষি অফিস বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর মাঠে সবধরনের সবজি চাষ করা হয়। শীতের আগাম সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে সাড়ে ৭৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করা হয়। এখন মাঠে রয়েছে আগাম বাঁধাকপি। তবে এখন বাঁধাকপির ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। বীজ কোম্পানির লোকজন নিন্মমানের বীজ সরবরাহ করায় কপির পাতা বাঁধেনি। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে পাতা বাঁধার কথা। অথচ জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জানা গেছে, আগাম বাঁধাকপি চাষে প্রতি বছর কৃষকরা লাভবান হলেও এবার ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বাঁধাকপিতে। বীজ ব্যবসায়ীরা নি¤œমানের বীজ সরবরাহ করায় গাংনী ও  মুজিবনগর এলাকায় অন্তত তিনশ হেক্টর হেক্টর জমির কপির পাতা বাঁধেনি। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

চাষিরা জানান, স্থানীয় বাজার থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহকৃত রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাঁধছে না। অন্যান্য কোম্পানির দেয়া বীজ রোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। সার বীজ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। অন্তত সাড়ে তিনশ চাষি এ প্রতারণার স্বীকার।

সরেজমিনে গাংনীর সাহারবাটি নওপাড়া ও মুজিবনগর রাজাসন বীজ ব্যবহারকারীদের কপিক্ষেতে কপির পাতা বাঁধেনি। কপির পাতা কুঁকড়িয়ে ও পচে যাচ্ছে। অন্যরা অন্যান্য কোম্পানির দেয়া বীজ রোপণ করে বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। তারা জানান, একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেকটা পাতা কোঁকড়ানো। পাতা পচে যাচ্ছে। সার বীজ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে। অনেকেই বাধ্য হয়ে জমিতে চাষ দিয়ে অন্য ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বীজ সরবরাহকারী আনারুল ইসলাম জানান, তিনি মূলত সার ও বিষের ব্যবসা করেন। মেহেরপুর বড় বাজারের সুমনা বীজভাণ্ডার থেকে বীজ এনে চাষিদের দেয়া হয়েছে। কপির পাতা বাঁধেনি বিষয়টি সুমনকে জানানো হলেও তার কোনো সাড়া মিলছে না। বিভিন্নভাবে সে সময়ক্ষেপণ করছে। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন ও মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চাষিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি।

 চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০