মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী :ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বরাবরের মতোই এবারও সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে মেহেরপুরের গাংনীতে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা বাজারে আদা, রসুন, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, হলুদ এবং ধনিয়ার দাম বেড়েছে এবং দামের এই ঊর্ধ্বগতির ধাক্কায় নি¤œ আয়ের মানুষ ভুগছে। ক্রেতাদের দাবি, ঈদের চাহিদা মেটাতে মশলার পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও বাড়তি মুনাফার জন্য ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে উৎসবের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে প্রশাসন বলছে ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। বেশি দামে কেউ কোনো মালামাল বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি গাংনী ও বামন্দী বাজার ঘুরে দেখা যায়, রান্নার জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। এছাড়া দেশি হলুদ ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি, জিরা ৯০০ টাকা কেজি, মরিচ (শুকনা) ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাচির কেজি ২৬শ’ থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা। লবঙ্গ ২ হাজার টাকা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছে ২১০-২২০ টাকা অথচ বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ২৮০ টাকার উপরে। একইভাবে কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনিয়া এখন ২০০, ১০০ টাকা বেড়ে গোল মরিচ ১ হাজার, ৫০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৫৭০ এবং ৭০ টাকা বেড়ে তেজপাতা ২০০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া প্রতি কেজি সরিষা ৩০০ থেকে ৩৫০, মেথি ১২০ থেকে ১৬০, আলু বোখারা ৪৮০ থেকে ৫০০, কিশমিশ ৪৪০ থেকে ৪৬০, কাঠবাদাম ৭৪০ থেকে ৭৬০, কাজু বাদাম ৮২০ থেকে ৯৫০, পেস্তা ২ হাজার ৬৬০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ এবং পাঁচফোড়ন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দাম নির্ধারণের পরও বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকার উপরে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ১২০ টাকা খুচরা দাম নির্ধারণ করা হলে তারা পাইকারিতেই চিনি কিনছেন ১২৫-১৩০ টাকায়। এছাড়াও কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছে না।
গাংনী ও ঐতিহ্যবাহী বামন্দী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মসলার দামও বেড়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে যার কাজ করছেন তাদের ভূমিকাও যথেষ্ট নয়। এমন বাজার পরিস্থিতির জন্য ভোক্তারাও দায়ী করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে। তারা বলছেন অসাধু চক্র কিংবা তাদের সিন্ডিকেট বাজার অস্থিতিশীল করে ফায়দা নেবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাজার তদারকির দায়িত্বে যারা রয়েছে তাদের কাজই হচ্ছে এগুলো থেকে বাজারকে রক্ষা করা।
সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা আব্দুল আলীম বলেন, যদি পেঁয়াজ কিংবা আদার মজুত শেষ হয়ে যায় তাহলে কেন আগেই এলসি খোলার অনুমতি কিংবা আমদানি শুরু করা হয় না? সরবরাহ নেই এই অজুহাতে দেখা যাবে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ আদা-পেঁয়াজের ৩ গুণ বেশি দাম নেয়া হবে। অর্থাৎ এক মাস ভোক্তার কাছ থেকে অবৈধভাবে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু এ জন্য দায়ী যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্ন তার।
জাতীয় ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ জানান, বাজারে জিরা আদা ও এলাচের দাম একটু বেশি রয়েছে। নিয়মানুযায়ী মিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু জানান, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। কয়েকটি মসলার দাম বৃদ্ধির খবর এসেছে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কেউ বেশি দামে মসলা বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।