গাংনীতে সরকারের বেঁধে দেয়া দাম উপেক্ষিত

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): সরকারের বেঁধে দেয়া দামে কোনো কৃষিপণ্য বিক্রি হচ্ছে না মেহেরপুরের গাংনীতে। পাইকারী বাজারে দাম না কমার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা আগের দামেই সব কিছু বিক্রি করছেন। বাজার দর তদারকিসহ সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের কোনো সংস্থাকেও দেখা যায়নি। তবে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন বলছে বাজার মনিটরিং করা হবে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারি পণ্য খেজুরের দাম আগের মতোই আছে। জিহাদি খেজুরের দাম সরকারিভাবে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। তেমনিভাবে ১৩০ টাকার মসুর ডাল ১৪০ টাকায়, ১৬৫ টাকা মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। ছোলার দাম ৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। ১২০ টাকার বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা দরে।

সবজির মধ্যে বেগুনের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সিম ও আলুর বাজার লাগাম ছাড়া। প্রতি কেজি সিম ৬৫ টাকা ও আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায় আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। গাজর ৮৫ টাকা, শরবতের জন্য বেল আকার ভেদে ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। গরুর মাংস প্রতি কেজির দাম ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা।

মাছের বাজার একটু চড়া, তবে দোশ মাছের ক্ষেত্রে দাম আকাশচুম্বী। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। টাকি মাছ ৩৫০ টাকা ও মাগুর মাছ প্রতিকেজি ৫০০ টাকা থেকে ৫২০ টাকা। সিলভার কার্প আকার ভেদে ২২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকা কেজি দরে।

ক্রেতা সাধারণের মতে, সরকার রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করেন। ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজার সংযোগ শাখা থেকে জারিকৃত পরিপত্রের নির্ধারিত দামের বাইরে পণ্য বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এটি বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার মনিটরিং করবেন। অথচ আজও কোনো সংস্থা বাজার মনিটরিংয়ে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা তাদের মর্জিমাফিক দামে পণ্য বিক্রি করছেন। সরকার যদি বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে বলেও জানান ক্রেতাসাধারণ।

গাংনী বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর, হেমায়েতপুর বাজারের মাংস ব্যবসায়ী নাগর ও ইয়ামিন জানান, বাজারে ছাগল-গরুর দাম চড়া। যে দামে ছাগল গরু কিনে আনা হয় সে অনুযায়ী দাম ধরে বিক্রি করা হয়। কেজি প্রতি ১৫ টাকা লাভ যোগ করে মাংস বিক্রি করা হয়। বেশি দামে কিনে বাজারে তো সস্তা দামে বিক্রি সম্ভব না। মাংসের বাজার নির্ধারণ করার আগে গরু-ছাগলের দাম নির্ধারণ করা জরুরি। ছাগলের মাংস বিক্রেতা বামন্দীর আরিফ কসাই জানান, বাজারে ছাগলের দাম বেশি। বিশেষ করে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল কেনা বড়ই কষ্ট। বেশি দামে ছাগল কিনে কি অল্প দামে মাংস বিক্রি সম্ভব? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তিনি।

মেহেরপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ জানান, সরকারের নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির বিষয়টি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। তার পর নিয়মিতভাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজন বাজার মনিটরিং করছে। বেশি দামে কেউ পণ্য বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, ইতোমধ্যে সব ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বৈঠক করা হয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেউ বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান,  বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে এবং আগামীতেও নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। যারা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০