Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:55 pm

গাংনীর সড়ক গুলোয় হাটবাজার বাড়ছে দুর্ঘটনা

প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর): মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন সড়কঘেঁষে অন্তত ২৫টি সাপ্তাহিক হাট বসে। নিজস্ব জায়গা না থাকায় রাস্তার দুপাশে হাটবাজার বসায় পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা ছাড়াও প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণহানির ঘটনা ছাড়াও অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় হাটমালিকরা বেপরোয়াভাবে এসব রাস্তার ধারে বাজার বসাচ্ছেন এবং খাজনা আদায় করছেন। তবে প্রশাসন বলছে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি ৫৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে মেহেরপুরের অংশে রয়েছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার।

সড়কের দুপাশে গোপালপুর, মদনাডাঙ্গা, গাঁড়াডোব রাইসমিল পাড়া, বাঁশবাড়িয়া, গাংনী, চেংগাড়া, জোড়পুকুরিয়া, তেরাইল, ছাতিয়ান, বাওট ও আকুবপুরে বসে বড় বড় হাটবাজার। আঞ্চলিক এই মহাসড়কটিতে দ্রুতগতির যান চলাচলে নিয়মিত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়তই প্রাণহানি আর পঙ্গুত্ববরণ করছে মানুষ। এছাড়াও গাংনী-কাথুলী-হাটবোয়ালিয়া সড়কের মড়কা, রাইপুর ও হেমায়েতপুরে রাস্তার ওপর হাট বসে। এছাড়া সিন্দুরকৌটা ও ধানখোলা মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে বসে সাপ্তাহিক বাজার।

ট্রাকের ড্রাইভার ঝন্টু ফকির ও ইন্তাজুল ইসলাম জানান, মেহেরপুর থেকে বিভিন্ন সবজিবোঝাই করে প্রতিদিনই অর্ধশতাধিক ট্রাক নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া দিয়ে ঢাকার পথে যেতে হয়। মহাসড়কের পাশে কোনো কোনো স্থানে সড়কঘেঁষে হাটবাজার বসায় ঝামেলা তৈরি হয়। মানুষ পথ ছাড়তে চায় না। বিশেষ করে গাংনী বাজার, পুড়াপাড়া, বাঁশবাড়িয়া, জোড়পুকুর ও বাওট বাজার তো পুরো সড়কের ওপরে বসে। এত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।

মড়কা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ঠান্টু মিয়া ও আসাদুজ্জামান জানান, রাস্তায় বসে ব্যবসা করতে মন চায় না। এখানে জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। রাস্তার ওপর হাটবাজার বসানোর কারণে এখানে যানজট হয়, কিন্তু জিনিস তো বিক্রি করতে হবে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ইজারদাররা নিয়মিত টোল আদায় করলেও বসার ব্যবস্থা করে না। একই কথা জানালেন হেমায়েতপুরের মাছ ব্যবসায়ী ইন্তাজুল। তিনি জানান, প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে। আগে প্রাইমারি স্কুলের মাঠে হাট বসানো হতো। স্কুলে প্রাচীর দেয়ার পর রাস্তায় বসতে হয়। মাঝে মাঝে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ক্রেতাদের গায়ের ওপর উঠে আসার উপক্রম হয়। অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে হেমায়েতপুর হাটের ইজারদার সোহেল জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাট ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো জায়গা না থাকায় ব্যবসায়ীরা রাস্তার ধারে বসে। নিষেধ করলেও শোনে না। আবার তারা ব্যবসা না করলে তাদের যেমন সংসার চলবে না, তেমনি ইজারদারদেরও পুুঁজি হারাতে হবে।

মেহেরপুর জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ফেরদৌস জানান, মহাসড়কঘেঁষে কোনো হাটবাজারই বৈধ নয়। এমনকি যেকোনো সড়কে মানুষের বেশি সমাগমই নিষিদ্ধ। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়, সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা শতভাগ থাকে। ট্রাফিক বিভাগ রাস্তা বাদ দিয়ে হাটবাজার বসানো থেকে বিরত থাকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ইজারদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে হাট না বসানোর তাগিদ প্রদান করছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু জানান, আঞ্চলিক মহাসড়ক ছাড়াও লোকাল রাস্তায় হাট বসানোর বিষয়টি দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি হাট সরানোর জন্য চেষ্টা করা হলেও স্থানীয় লোকজনের চাহিদা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা শুনে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে হাট না বসানো ও চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করতে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা।