গাইবান্ধা নির্বাচনে ভোটচুরি স্বচক্ষে দেখেছি: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাইবান্ধায়-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভোট কারচুপি স্বচক্ষে দেখেছি। তাই পুরো ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

সিইসি বলেন, সকালে ভোট শুরু হয়। নির্বাচন ভবনে সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। আমরা বসে ভোট পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি, ভোট গ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে এবং অনেক কক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করেছি। অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট প্রদানে সহায়তা বা বাধ্য করছেÑএটা সুস্পষ্ট লক্ষ্য করেছি। যেটি নিয়ম নয়। তারপরও আমরা দেখেছি, পোলিং এজেন্ট সম্ভবত তাদের অনেকের গায়ে যে পোশাক সেখানে প্রতীক ছাপানো ছিল। মেয়েদের একই রকমের শাড়ি, ওড়না ছিল যেটা নির্বাচন আচরণবিধির পরিপন্থি।

তিনি বলেন, আমাদের সহকর্মীরা সকাল ৮টা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখেছি; কেউ কক্ষ ত্যাগ করেননি। এটা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং অনিয়মগুলো বা ম্যাল প্র্যাকটিসেসগুলো মোটা দাগে হচ্ছিল। যার ফলে আমরা উপস্থিত থেকে প্রথমে তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরে ১৬টি কেন্দ্রে, তৃতীয় দফায় ১২টি; চতুর্থ দফায় ৯টি এবং সবশেষ আরও তিনটি; মোট ৪৩টি ভোট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়ে সাড়ে ১২টায় কক্ষ ত্যাগ করি।

সিইসি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করলামÑকতগুলো কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো। যার ফলে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলাম না। সবমিলিয়ে মোট ৫০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করেছি। রিটার্নিং অফিসারও একটি কেন্দ্রের ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে। এরপর আমরা কমিশনের সব সদস্য মিলে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে থাকি, বিশ্লেষণ করতে থাকি। এ পর্যায়ে আমাদের আরপিও ৯১ই ধারা অনুযায়ী কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়, ভোট সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমরা নিশ্চিত হই ৫০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে বাকি কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ, ফলাফল সব বিবেচনা করলেও আসলে সঠিক মূল্যায়নটা হবে না। 

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। একটি পক্ষ বা একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছে। আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা ৫১টি ভোট কেন্দ্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর আইন-কানুন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ অনুচ্ছেদে যে দায়িত্ব ইসিকে দেয়া হয়েছে, ইসির কাছে এটা প্রতীয়মান হয় নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমরা পরিশেষে পুরো নির্বাচন গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে (রিটার্নিং কর্মকর্তাকে)। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না। পরে বিধিবিধান অনুযায়ী কী করতে হবে দেখব। কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেব।

গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপনির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ মোট ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ হচ্ছিল।

নির্বাচনী এলাকায় সাঘাটা উপজেলায় ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলায় সাতটিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে মিলে ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০।

ফজলে রাব্বী মিয়া টানা ৯ মাস ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই শেষে গত ২২ জুলাই নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ কারণে তার আসনটি শূন্য হয়। সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে উপনির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সিইসি বলেন, পরবর্তী সময়ে আইন ও বিধিমালা দেখে তারা নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০