গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে কমিটি কেন নয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ রক্ষায় সারাদেশে গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণে কেন একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই রুল জারি করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি ও গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটা হচ্ছে এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে গত ৫ মে জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

সোমবার এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন রাখা হয়। রিট আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যত্রতত্র গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যেভাবে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে গাছ কাটার এক মহোৎসব চলছে।’

শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা দিন দিন কমছে এবং সম্প্রতি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক বনায়ন চুক্তিতে সারাদেশে লাগানো গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে; যা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

শুনানি শেষে রুল জারি করে বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

১. সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে (ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ ব্যতীত) ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না।

২. ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না।

৩. সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪-এর বিধানে গাছ লাগানোর চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থ প্রদানের বিধান সংযুক্ত করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না।

৪. গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকের সমন্বয়ে একটি সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না।

৫. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবেশ অফিসার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে কমিটি কেন নির্দেশ দেয়া হবে না।

৬. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে; কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না।

৭. কমিটি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিবাদীদের নিজ নিজ এলাকায় যাতে কোনো গাছ কাটা না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না।

এইচপিআরবির পক্ষে রিট আবেদনকারীরা হলেন অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈই।

বিবাদীরা হলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সচিব, পরিবেশ বিভাগের মহাপরিচালক; ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপেরেশনের দুই মেয়র ও দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান বন সংরক্ষক; সড়ক মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক।

শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল, অ্যাডভোকেট নাছরিন সুলতানা ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল হক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০