Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:26 pm

গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শিশু ও নারীসহ ৫০ জন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় ইসরায়েল সরকার। খবর: বিবিসি।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এক দীর্ঘ বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে কখন থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বা জিম্মিদের কোথায় কীভাবে মুক্তি দেয়া হবে, সেসব বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।

ওই ৫০ জনের অতিরিক্ত প্রতি ১০ জন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও এক দিন করে বাড়বে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সরকার সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য। আজ (মঙ্গলবার) রাতে, সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে প্রথম পর্যায়ের রূপরেখা অনুমোদন করেছে, তাতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জন জিম্মিকে চার দিনে মুক্তি দেয়া হবে, এ সময় লড়াইয়ে একটি বিরতি অনুষ্ঠিত হবে। অতিরিক্ত প্রতি ১০ জন জিম্মির মুক্তির ফল হিসেবে বিরতি এক দিন করে বাড়বে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার, আইডিএফ (ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী) এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, হামাসের নির্মূল সম্পন্ন করবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি নতুন কোনো হুমকি থাকবে না তা নিশ্চিত করবে।

হামাসের দাবি ছিল, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি তাদের সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। সে বিষয়ে ইসরায়েলের বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, গাজার সব এলাকায় আকাশ ও স্থলপথে যেকোনো ধরনের অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকবে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সামরিক যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। চিকিৎসা উপকরণ, জ্বালানিসহ মানবিক সহায়তা নিয়ে শত শত ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এসব ট্রাককে গাজায় ঢোকার অনুমতি দেবে।

হামাস জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় চার দিনের জন্য ড্রোন ওড়ানো বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। উত্তর গাজায় প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা (স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) ড্রোন ওড়ানো বন্ধ রাখা হবে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় গাজার যেকোনো এলাকা থেকে যে কাউকে আটক করা কিংবা কারও ওপর হামলা না করার বিষয়েও সম্মত হয়েছে ইসরায়েল, এমনটাই জানিয়েছে হামাস।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় তিন বছরের এক শিশুসহ অন্তত তিন মার্কিন নাগরিককেও হামাস মুক্তি দেবে বলে তারা আশা করছেন।

গাজায় বন্দি ৫০ জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তির সুযোগ দিতে ও গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দিতে বুধবার ইসরায়েলের সরকার ও হামাস চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কাতারের কর্মকর্তারা কয়েক দিন ধরে জানিয়ে আসছিলেন, একটি চুক্তি আসন্ন। পাশাপাশি মার্কিন, ইসরায়েলি ও হামাসের কর্মকর্তারাও একই আভাস দিয়ে আসছিলেন।

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর বিনিময়ে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে। যুদ্ধবিরতির এ চুক্তি মানবিক ত্রাণবাহী, চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানিবাহী কয়েকশ ট্রাকের গাজায় প্রবেশ অনুমোদন করবে।

চুক্তির ঘোষণা দেয়ার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হস্তক্ষেপ অস্থায়ী চুক্তিটি উন্নয়নে সহায়তা করেছে আর তাতে কম ছাড়ে বেশি জিম্মির মুক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

চুক্তির আলোচনার বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, এতে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময় অন্তর্ভুক্ত হবে। যুদ্ধবিরতি গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশও অনুমোদন করবে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জিম্মিদের প্রথম আজ বৃহস্পতিবার মুক্তি দেয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কোনো ইসরায়েলি নাগরিক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাতে চাইলে তাকে সুযোগ দিতে চুক্তি কার্যকর করার আগে বাধ্যতামূলকভাবে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে বলে প্রতিবেদনগুলো বলা হয়েছে।