শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইসরাইলের বিমানহামলায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বেসামরিক নাগরিকদের এক কোটি ডলার মানবিক সহায়তা দেবে জাপান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর: আল জাজিরা।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সহায়তার এই অর্থ যেন গাজার বেসামরিক লোকজনের হাতে পৌঁছায়, সেজন্য ইসরাইলের সরকারের সঙ্গে এরই মধ্যে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি, শিগগির এই যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে।
তিনি এ বিষয়টি নিয়ে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি তাকে বলেছেন যে, খুব দ্রুত ইসরাইল-হামাস পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে আশা করছে টোকিও।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত হামলা করে হামাস। পরে তারা ইসরাইলে ঢুকে আক্রমণ শুরু করে। হামাসের হামলায় ইসরাইলে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়। হামাসের এই হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলের বিমানবাহিনী। একই সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় গাজার সব সীমান্তপথ, বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় উপত্যকার পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ।
একদিকে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন গাজার সাধারণ বেসামরিক লোকজন। বিশেষ করে কয়েক দিন আগে জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ পর্যন্ত ইসরাইলের বিমানবাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে দুই হাজার ৮১৭ জনে। এই নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন। এ ছাড়া গত ১০ দিনের হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ড গাজার জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত এই জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ সরাসরি জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে ইসরাইল-হামাস সংঘাতে ইরান কিংবা হিজবুল্লাহর মতো শক্তিগুলোর জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইসরাইলি জলসীমার কাছে দুই হাজার সৈন্য মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দুই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, দুই হাজার মেরিন ও নাবিক নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের র্যাপিড রেসপন্স ফোর্সকে ইসরাইলের জলসীমার কাছে পাঠানো হচ্ছে। ইসরাইলকে পাহারা দিতে এর আগে পাঠানো একাধিক রণতরী ও যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে যোগ দেবে সংঘাত মোকাবিলায় দক্ষ এই বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ইরান ও তাদের সমর্থিত লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রতি কড়া সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ‘আসন্ন কয়েক ঘণ্টার মধ্য’ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি বলেছেন, গাজায় ইহুদিবাদী শাসকদের (ইসরাইল) যা ইচ্ছা তা-ই করতে দেবে না ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরইলের বিরুদ্ধে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিরোধ শক্তিগুলোর অগ্রিম পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ইরান অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, সব সম্ভাবনাই অনুমেয়। গাজায় সংঘটিত অপরাধের ব্যাপারে কোনো পক্ষেরই উদাসীন হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন ইরানের শীর্ষ এই কূটনীতিক।