Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:22 pm

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরে উদ্যোগ প্রয়োজন

গাজায় যুদ্ধবিরতিতে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলেও সবার ধারণা ছিল প্রাণহানি ও নৃশংস ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এমনকি যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় ফিরে যাওয়া ফিলিস্তিদের ওপর নারকীয় হামলা চালিয়েছে বাহিনী। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় নরক ফিরে এসেছে। নতুন করে শুরু হওয়া লড়াই এ অঞ্চলে বিরাজমান তীব্র মানবিক সংকট আরও গভীর করে তুলবে।

জতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত হবে ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। সাময়িক যুদ্ধবিরতির কয়েক দিনে উভয় পক্ষই মেনে নিয়েছে যুদ্ধবিরতি। কিন্তু একটি পক্ষ শর্ত ভাঙলেই আবার যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এখানে যারা অতর্কিতে হামলা করছে, তারাই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। একটি পক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করলে অন্য পক্ষের তা মানা অপিরিহার্য নয়, এটিই চুক্তির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিয়ম। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতারা প্রায়ই বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি নেতাদের দায়িত্ব এই এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। শুধু তা-ই নয়, এই সংঘাতের মূল কারণ কী, সেটি নিয়ে তাদের আন্তরিকভাবে সংলাপ শুরু করা উচিত। প্রশ্ন ওঠে, যারা বারবার হামলার শিকার তারা কীভাবে ‘আন্তরিকভাবে’ সংলাপ শুরু করবেন। যারা হামলা করে, তারা কেন ‘আন্তরিক’ হয় না!

মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের কারণে চলমান যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ জটিল হয়ে পড়ছে। ইসরায়েলের বোমা হামলায় ১৮৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ৫৮৯ জন আর ২০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি মেনেই বিরোধ নিরসন করতে হবে। ফলে চলমান এই বিভক্তি মিটমাট করতে যতভাবে সম্ভব সবভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। গাজার বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সব আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং যুদ্ধ করছে না এমন নিরীহ মানুষ ও বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এড়াতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে। গাজা পুনর্গঠন উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদারেও কাজ করতে হবে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার যেকোনো সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদ যথাযথ আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করছে না, এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর অন্যতম কারণ হলো ইসরায়েলের প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রভাবশালী সদস্যের অন্ধ সমর্থন। কেন দখলদার বাহিনীকে একটি দেশ একতরফা সমর্থন দিয়ে আসছে, সেটি খোলাসা করা উচিত। নইলে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার জন্য নৈতিক ব্যর্থতা এবং বিবেকের অবমূল্যায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে বিশ্বের অত্যাচারিত ও নিপীড়িত জনতার কাছে। যারা মানবতা, মানবাধিকার ও স্বাধিকারের পক্ষে উচ্চকিত, তারা আত্মমূল্যায়ন করলেই বিশ্বকে অনেক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।