শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেড় দিন অন্ধকারে ডুবে থাকার পর গতকাল থেকে গাজা উপত্যকায় স্বাভাবিক হচ্ছে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ। গাজায় ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত’ বিভিন্ন ত্রাণদাতা প্রতিষ্ঠানকে স্টারলিংক ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন কোম্পানিটির মালিক ইলন মাস্ক। গতকাল শনিবার মাস্কের ঘোষণার পরপর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন ইসরায়েলের যোগাযোগমন্ত্রী। খবর: বিবিসি।
গাজার সংবাদ সংস্থা সাফা ও হামাস-সংশ্লিষ্ট শেহাব নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, গাজায় অবস্থান করা কয়েকজন সাংবাদিক এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
এছাড়া রিয়াল-টাইম নেটওয়ার্ক ডেটাও গাজা ভূখণ্ডে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরছে বলে জানিয়েছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ ‘নেটব্লকস’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে গাজায় ইন্টারনেট ফেরার খবর দিয়েছে।
এক্সে এক পোস্টে ফিলিস্তিন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি থেকে বলা হয়, সেখানে টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা ধীরে ধীরে ফিরছে। আমাদের কারিগরি দলগুলো চ্যালেঞ্জিং এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর ক্ষতি দক্ষতার সঙ্গে সারিয়ে তুলছে।
গত শুক্রবার গাজায় রাতভর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই যুদ্ধকে ইসরায়েলের বেঁচে থাকার এবং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলই বিজয়ী হবে।
শুক্রবার ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গাজাকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ইসরায়েলের হামলার জবাবে ওই রাতে এবং পরদিন ভোরে হামাসও রকেট ছোড়ে। সেই রাতে আসলে কী ঘটেছিল তার বিশদ বিবরণ এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের একের পর এক হামলায় শুক্রবার রাতে গাজা অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ভূখণ্ডটির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ত্রাণ সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না। ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জরুরি পরিষেবা চালিয়ে যেতে পারছিলেন না।
এদিকে এক্সে মাস্ক বলেন, গাজার স্থলভাগের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে, তা পরিষ্কার না হলেও আমরা জানি। ওই এলাকার কোনো টার্মিনাল থেকে সংযোগ পাঠানোর অনুরোধ আসেনি।
টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে শনিবার গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান গাজার অধিবাসীরা। ইসরায়েলের বিমান ও স্থলাভিযান বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের পক্ষে প্রিয়জনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা, অ্যাম্বুলেন্স ডাকা বা সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মতে, গাজায় ব্ল্যাকআউট শুরু হয় শুক্রবারের শেষ দিকে। চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও বাজে রূপ নেয়ায় কারও জীবন বাঁচানো বা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের বেলায় বাধার মুখে পড়ে সংস্থাগুলো।
তবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস ব্যবহার করবে না, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি ইলন মাস্ক। এ বিষয়ে স্পেসএক্স কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মাস্কের পোস্টের জবাবে ইসরায়েলের যোগাযোগমন্ত্রী শলম কার্হি বলেন, এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক লড়াই’ করবে ইসরায়েল। হামাস এর মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালাবে। মাস্ক সম্ভবত অপহƒত শিশু, ছেলে, মেয়ে ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মুক্তির শর্ত দেবেন। হয়তো সবাইকেই! ততক্ষণে আমার দপ্তর স্টারলিংকের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনের কয়েকটি এলাকায় ইন্টারনেট জ্যামিংয়ের মতো পদক্ষেপ নেয়। তখন ইন্টারনেট সংযোগ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে স্টারলিংক। এছাড়া রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়া অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে অস্বীকৃতির কথা জানান মাস্ক। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ওই অঞ্চলে থাকা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ওপর ইউক্রেন আক্রমণ চালাতে পারে, এমন ঝুঁকি থাকায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন।