Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:07 pm

গাজায় হামলার আশু অবসান ঘটুক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় চলমান হামলা আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। চলমান এই যুদ্ধ আরও সম্প্রসারিত করার ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, এটা দীর্ঘ যুদ্ধ হবে এবং আমরা লড়াই শেষের কাছাকাছি অবস্থানে নেই।

সর্বশেষ খবর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ হাজার ৯১৫ জনে। গতকাল বুধবার বিজ্ঞপ্তিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় আহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ হাজর ৯৫৮ জনে।

ফিলিস্তিনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা কোনোভাবেই সঠিক নয় বলে আমরা মনে করি। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এর নিন্দা জানায়। সময় এসেছে ফিলিস্তিন প্রশ্নে মুসলিমদের বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলো অভিন্ন অবস্থান নেয়া। আশার কথা, গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে নববর্ষ উদ্যাপন বাতিল করেছে আরব আমিরাতের শারজাহ। মঙ্গলবার রাতে শারজাহ পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নববর্ষ উদ্যাপনে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের যে অল্প কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে, তার মধ্যে একটি আরব আমিরাত। তারপরও গাজার জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য চলতি বছর নববর্ষের সন্ধ্যায় আতশবাজি ও অন্যান্য অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে দেশটির শারজাহ কর্তৃপক্ষ। এটি নিশ্চয়ই গাজা উপত্যকায় মুসলিমদের প্রতি সংহতি ও মানবিক সহযোগিতার আন্তরিক প্রকাশ। শারজাহর অবস্থানের ফলে এ অঞ্চলের অন্য মুসলিমপ্রধান দেশগুলো নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আমরা জানি, ফিলিস্তিনে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে পশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর উদ্যোগ নিতে আগ্রহী নয়। পশ্চিমা গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকে এ প্রশ্নও তুলেছেনÑপশ্চিমারা আসলেই ফিলিস্তিনে শান্তি চায় কি না। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবাদে যারা গাজায় ইসরায়েলের বারবার চালানো গণহত্যা, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সহিংস দখলদারি এবং ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ করে ইসরায়েলের বানানো একদেশদর্শী আইন সম্পর্কে যারা জানেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে একপ্রকার বিরক্ত।  সবাই বলছেন, হামাসের চালানো হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলা হয়তো অনিবার্য ছিল। কিন্তু ইসরায়েল জবাব হিসেবে যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা সব আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক বিবেচনাপ্রসূত সীমাকে লঙ্ঘন করেছে। পশ্চিমারা ইসরায়েলকে থামতে তো বলেইনি, বরং তারা বলছে, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।’ কিন্তু তারা কীভাবে ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের সীমাহীন রক্তপাত দেখছে, যা বিশ্বের তাবৎ সংবেদনশীল মানবিক মানুষ মেনে নিতে পারছে না।

এটিই প্রত্যাশিত ছিল যে, ইসরায়েলের এই গণহত্যাকে সমর্থন না করে ভিন্নভাবেও পশ্চিমারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারত। দেশে দেশে মানবাধিকার ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বক্তব্য রাখে যুক্তরাষ্ট্র, তাই মানবাধিকার প্রশ্নে দেশটি একটা সাধারণ বিধি মেনে চলে বলেই সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ছিল। ফিলিস্তিন প্রশ্নে তাদের ভূমিকা এই ধারণাই শক্তিশালী করেছে যে, এই যুদ্ধ পশ্চিমের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের সত্যিকার চেহারা দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করি, ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে।