শেয়ার বিজ ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। খবর: রয়টার্স, আল জাজিরা
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স শুক্রবার এই হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, আহত মানুষ ছটফট করছেন। আর প্রাণ হারানো মানুষগুলোর নিথর দেহ পড়ে আছে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গত মাসে যুদ্ধ শুরুর পর আল-শিফা হাসপাতালে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। রয়টার্সের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সেটি হাসপাতালের একটি বহিঃর্বিভাগ। আশ্রয় নেওয়া মানুষ সেখানে রাতের বেলা ঘুমাতেন।
ভয়াবহ এ হামলা ও হামলার ভিডিও নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি বাহিনী।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতালকে এখন চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। হাসপাতাল থেকে মাত্র ২৫০ মিটার দূরে অবস্থান করছে তারা।
শুধু আল-শিফা নয়; গাজায় বড় যতগুলো হাসপাতাল রয়েছে সেগুলোর সবগুলোই এখন ঘিরে ধরছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তাদের দাবি, হাসপাতালের আশপাশে এবং নিচে হামাসের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-রানতিসি হাসপাতালকে ইতিমধ্যে ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি সেনারা। স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আল-রানতিসি হাসপাতালের গেটে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলের ট্যাংক। ওই সময় সেখানে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
গাজায় বাস্তুচ্যুত ১৫ লাখ
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নির্বিচার ইসরায়েলি হামলার কারণে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৫ লাখ লোক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তার পরও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার অধিবাসীদের বাস্তুচ্যুত বা শাসন করার কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর সংঘর্ষ শুরুর পর এই প্রথম সরাসরি নেতানিয়াহু এমন কথা বললেন। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে ইসরায়েল অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজা শাসন করবে।
নেতানিয়াহুর সেই হুমকির পর ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, ইসরায়েলের চূড়ান্ত ইচ্ছা হয়তো গাজাকে সরাসরি দখল করে ফেলা ও সেখানে ইসরায়েলি শাসন বলবৎ করা। সেই আশঙ্কার মধ্যেই নেতানিয়াহু বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কাউকে বাস্তুচ্যুত করার কথা ভাবছি না।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি সেটা হলো, গাজার উত্তরাংশ যেখানে যুদ্ধ চলছে, সেখান থেকে আমরা লোকজন সরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে নেওয়ার চেষ্টা করছি, যেখানে আমরা নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সেখানে ফিল্ড হাসপাতালও চালু করতে চাই। আমরা সেখানে মানবিক সহায়তাও যেতে দিচ্ছি এবং এভাবে আমরা যুদ্ধ চালাচ্ছি।’
গাজাকে ইসরায়েল সরাসরি শাসন করবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার গাজাকে নিরস্ত্রীকৃত বা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীমুক্ত পুনর্গঠিত এলাকা হিসেবে দেখতে চাই। এর বেশি কিছু অর্জন করার নেই আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গাজা জয় করতে চাই না। আমরা গাজা দখল করতে চাই না এবং আমরা গাজা শাসনও করতে চাই না।’
গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৪০০ শিশু
গাজায় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহত শিশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪০০ জন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে ১৪০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা এবং ২০০ জনকে জিম্মি করার পর ইসরাইল গাজায় বোমা হামলা শুরু করে।