Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 8:33 pm

গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে আরও তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৫০ জন। তবে তাৎক্ষণিক নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

নিহতরা হলেনÑবগুড়ার সোনাতলা থানার নামাজখালী গ্রামের শাহার আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান (২৩), চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বামনসুন্দর গ্রামের মৃত মোকছেদ আহমেদের ছেলে আবদুস সালাম (৫৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের বাচ্চু ছৈয়ালের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩০), মাগুরার হরিশপুরের গোবরা গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের ছেলে আল আমিন (৩০), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানার বরাট বাজার এলাকার মনিন্দ্র নাথের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শীল (৩৮) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার কুণ্ডা গ্রামের সাগর আলী মীরের ছেলে মজিবুর রহমান (৩৭)।

এছাড়া মনসুর (৩০) ও আরশাদ হোসেন (৩৬) নামে নিহত দুজনের নাম পাওয়া গেলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মধ্যে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার মরিয়া গ্রামের মৃত মো. লিয়াকত আলীর ছেলে সোলেমান মিয়া (৩০) নামে একজনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। নিহত অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। কামরুল ইসলাম (৩২) নামের আহত একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানায়, ঈদের ছুটির পর কারখানাটি মঙ্গলবার খোলার কথা ছিল। তবে সোমবার ডায়িং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু ছিল। কারখানার একটি চারতলা ভবনের নিচতলার ডায়িং ও ফিনিশিং সেকশনে এবং দ্বিতীয় তলার নিটিং সেশনে ৮০ থেকে ৯০ জন কাজ করছিলেন। এ ভবন সংলগ্ন একটি টিনশেডে সাত টন ও ১০ টনের দুটি বয়লার ছিল। সোমবার এ বয়লার দুটি চালু করা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সাত টনের বয়লারটি হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে চারতলা ওই ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও মেশিনপত্র উড়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে।

বিস্ফোরণের ফলে এমা গার্মেন্ট, ইসলাম গ্রুপের ইউনিট-২, তাসনিয়া ও মৌরিশাস গার্মেন্টসহ আশেপাশের কারখানার ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং দরজা-জানালার কাচ ভেঙে যায়। একজন শ্রমিকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় দুইশ গজ দূরে এক ভবনের চাদে গিয়ে পড়ে। এছাড়াও নিহত আরও কয়েক শ্রমিকের ছিন্নভিন্ন দেহ ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে। এতে আশেপাশের শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে  দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে হতাহতদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর, টঙ্গী ও সাভার ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।

এদিকে গতকাল বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক নিহত প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিরও হুশিয়ারি দেন।

ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান শ্রমমন্ত্রী। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।