শেয়ার বিজ ডেস্ক: গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনের সব ধরনের প্রচারকাজ গত মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে। এর আগে শনিবার মধ্যরাত থেকে বহিরাগতদের সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান নিষিদ্ধ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ফলে গাজীপুরের ভোটার নন, বড় দুই দলের এমন নেতারা আজ থেকে সেখানে অবস্থান করতে পারবেন না। এদিকে নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তায় মাঠে নেমেছেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা।
জিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নেতাকর্মীদের নিয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় শেষবারের মতো প্রচারকাজে যোগ দেন।
গত ৩১ মার্চ জিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে জিসিসি নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়রপ্রার্থী ও নির্বাচন কমিশন। শুনানি শেষে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুন জিসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।
এবার জিসিসির ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটারসংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।
বহিরাগতদের প্রচারকাজে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করায় সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে চলে গেলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে আচরণবিধি ভঙ্গের প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলন না করেই মঞ্চ ছেড়ে চলে যান তিনি।
শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে প্রশ্ন আহ্বান করেন মহিবুল হাসান। এ সময় নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয়ে তার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনার কথা আমি জানি না। তখন একজন স্থানীয় সাংবাদিক তার মোবাইল ফোন থেকে শনিবার রাত ১২টার পর বহিরাগতরা জিসিসি এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না বলে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরযুক্ত গণবিজ্ঞপ্তিটি দেখান।
এর কিছুক্ষণ পর বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি ও ডিএনসিসির মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মিডিয়া সেল থেকে আচরণবিধির বিষয়টি জানানোর পর আতিকুল ইসলামসহ কয়েকজন বহিরাগত নেতা মঞ্চ ছেড়ে চলে যান।
বিএনপির এজেন্টদের ট্রেনিং দেওয়া হয়নি
সংবাদ সম্মেলন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘বিএনপির এজেন্ট নেই, সেটা তো আমার দেখার বিষয় নয়। তাদের এজেন্ট তাদের কাছে কেন আসে না, সে বিষয়েও আমার করার কিছু নেই। আমরা তাদের কোনো এজেন্টকে বাধা দিচ্ছি না। আমার জানামতে তারা এজেন্টদের কোনো ট্রেনিংও করায়নি।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘হাসান উদ্দিন সরকার মুরব্বি মানুষ। তিনি আমার পার্টিকে ও আমাকে সন্ত্রাসী বলছেন। তার মতো একজন মুরব্বি মানুষের এমন কথা বলা উচিত নয়। বরং আমি হাসান উদ্দিন সরকারের বাসায় গেছি, তার খোঁজখবর রাখছি; তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করছি। তাকে যদি তার দল পছন্দ না করে, তবে আমাদের কী করার আছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছি না। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা কোনো কাজ করেনি। এতে গাজীপুরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২৪ জুন থেকে গাজীপুরের ভোটার ব্যতীত বহিরাগতরা প্রচারকাজে অংশ নিতে পারবে না, ইসির এমন প্রজ্ঞাপন জারির পরও কেসিসি মেয়র গতকাল প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এটি আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এখনও কোনো চিঠি পাইনি। যদি চিঠি পাই, তবে সেটি পালন করব।’
এ ব্যাপারে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, এ ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে গত ১২ জুন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি মোবাইল ফোনও ধরেননি।
এক প্রার্থী পুলিশের গাড়িতে করে ঘুরছেন
এক প্রার্থী পুলিশের গাড়িতে করে ঘুরছেন বলে মন্তব্য করে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ২৬ জুন নির্বাচনে ভোটার ও তার দলের এজেন্টদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ।
গতকাল সকালে টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন তার এজেন্ট ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তাদের এলাকা ছাড়ার জন্য বলে আসছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাই ভোটের দিন তিনি তার দলের এজেন্ট ও ভোটারদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শত উসকানি ও অত্যাচারেও নির্বাচন থেকে পিছপা হব না। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। একদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পুলিশের গাড়িতে করে ঘুরছে, অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনে কারচুপি করতে খুলনা থেকে পুলিশকে গাজীপুরে পাঠানো হয়েছে খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করার জন্য। নির্বাচনের দিন ধানের শীষের এজেন্টদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আটকে রেখে ভোট গণনার নীলনকশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সামান্যতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব। এটা আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জীবনের শেষ নির্বাচনটি সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাই।