গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ গুলিতে একজনের মৃত্যু

প্রতিনিধি, গাজীপুর : বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন শ্রমিক। নিহত শ্রমিকের নাম রাসেল হাওলাদার (২৬)। তিনি বাসন থানার এলাকার ডিজাইন এক্সপ্রেস লিমিটেডের ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। রাসেল ঝালকাঠি সদর উপজেলার খাঘুটিয়া গ্রামের হান্নান হাওলাদারের ছেলে।

বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, রাসেলকে মৃত অবস্থায়ই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

বাসন থানার ওসি আবু সিদ্দিক বলেন, কলম্বিয়া গার্মেন্টের সামনে সংঘর্ষে আহত এক যুবক মারা গেছে বলে শুনেছি।

তবে রাসেল কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তা তিনি জানাতে পারেননি।

বেতন বাড়ানোর দাবিতে সকালেই রাস্তায় নামেন শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহানগরীর ভোগড়া এলাকার কলম্বিয়া গার্মেন্টের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় বলে জানান বাসন থানার ওসি আবু সিদ্দিক জানান।

তিনি বলেন, সকালে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একদিকে মালেকের বাড়ি, অন্যদিকে নলজানি এলাকা থেকে বিক্ষোভ নিয়ে শ্রমিকরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভ করে।

তিন দিক থেকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করায় ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ পড়ে বলে জানান তিনি। পরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে করতে বিভিন্ন পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতেও ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করেন।

তিনি আরও বলেন, এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ভোগরা এলাকার কলম্বিয়া পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয় ও জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে দেন।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হই। পরে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা আগুন নেভান।’

সরেজমিন দেখা যায়, বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিবহন যাত্রীরা পড়ে চরম ভোগান্তিতে। ঘটনাস্থল থেকে ঢাকামুখী লেনে দক্ষিণ সালনা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাড়ির জট সৃষ্টি হয়।

এ সময় যাত্রীদের অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন।

শ্রমিকদের একটি দল গাজীপুরের ভোগড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে যানবাহন কারখানায় ভাঙচুর করতে গেলে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

একপর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ভোগড়া মধ্যপাড়া বাজার এলাকার কয়েক বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।

এ সময় স্থানীয়রা প্রতিরোধ করলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শ্রমিকদের লাঠির আঘাতে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মমিন মিয়ার মাথা ফেটে যায় বলে জানিয়েছেন তারই চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেন।

কলম্বিয়া কারখানার কয়েক শ্রমিক জানান, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও তাদের বেতন বাড়েনি। বেতন সেই আগের জায়গাতেই আছে। এখন তাদের আন্দোলন ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই বাধ্য হয়েই পথে নামতে হয়েছে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও তেলিচালা এলাকার লেগোস অ্যাপারেলস, এটিএস, বে-ফুটওয়ারসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। সপ্তম দিনের মতো সোমবারও শ্রমিকরা আন্দোলন বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও ইটপাটকেল ছুড়ে।’

পরে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০