নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যায় কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ নামের এ পোশাক কারখানায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে গতকাল সকালে উত্তরায় পৃথক অগ্নিকাণ্ডে দুজন নিহত হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডের কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ হওয়ার খবর পান। জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৮টার দিকে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
কারখানার লোকজন ও এলাকাবাসীর সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। চারতলা ভবনটির দোতলার কিছু অংশ খসে পড়েছে বলে জানান তিনি।
একই দিনে, রাজধানীর উত্তরায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে পাশাপাশি তিনটি ভবন। একটি ভবনের ছয়তলা সি-শেল আবাসিক হোটেলের ৩০২ নম্বর রুম থেকে দুটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। লাশ দুটি ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ জানান, সোমবার ভোর ৫টার দিকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী ভবনের বিপরীত দিকে রাস্তার পূর্বপাশে চার নম্বর সেক্টরের চারতলা সি-শেল রেস্তোরাঁর তিনতলায় প্রথম আগুন লাগে, পরে তা পাশের ছয়তলা সি-শেল আবাসিক হোটেল ও তার পাশের একে টাওয়ারে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় বলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মাহামুদুল হক জানান।
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিক জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সি-শেল আবাসিক হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে চতুর্থ তলার ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ওই থানার এসআই সুমন শিকদার জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার পরিচয় জানতে পেরেছেন।
মো. রাসেল মিয়া নামে ৩৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ঢাকায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে কাজ করতেন। তিনি চাঁদপুরের হাইমচড়ের নূর মোহাম্মদের ছেলে। ঢাকায় পল্লবীর এক বাসায় থাকতেন। তার সঙ্গে একই কক্ষ থেকে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় পুলিশ জানতে পারেনি।
ভেতরে আরও কেউ আছে কি-না জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস শাকিল নেওয়াজ বলেন, হোটেলের মালিক দাবি করেছিল, ভেতরে কেউ আটকা নাই। তারপরও দুজনকে পাওয়া গেছে। হতাহত অন্য কাউকে এখন পর্যন্ত আমরা দেখিনি। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আসার পর সি-শেল রেস্তোরাঁতেও কোনো কর্মচারীকে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।
কর্মচারীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেনি। পুলিশের কাছে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আসে। তার আগেই তারা সবাই পালিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত তিন ভবনের মধ্যে মাঝখানের চার তলা ভবনের পুরোটা জুড়ে ছিল সি-শেল রেস্তোরাঁ। ওই ভবনের পুরোটাই পুড়ে গেছে। উত্তরের ছয় তলা ভবনটির চতুর্থতলা থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত ছিল সি-শেল হোটেল অ্যান্ড রেসিডেন্স। আর তৃতীয় তলায় ছিল পার্টি সেন্টার। ভবনটি নিচতলায় রয়েছে একুশে সুইটস অ্যান্ড বেকারি এবং রহিম আফরোজের একটি আউটলেট আর দোতলায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের কার্যালয়।
শাকিল নেওয়াজ জানান, আগুনে সি-শেল হোটেল ও পার্টি সেন্টার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ দিকের এ কে টাওয়ারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সি-শেল রেস্তোরাঁর মালিক আমানউল্লাহ আমান নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি পাশের ভবনের একটি অংশ ভাড়া নিয়ে আবাসিক হোটেল চালাচ্ছিলেন। ছয়তলা ওই ভবনের মালিক উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হানিফ।
আবু হানিফের স্ত্রী ইসমে আরা হানিফ বলেন, আমাদের চারতলা থেকে ছয়তলা ভাড়া দিয়েছি আমানুল্লাহ আমানের কাছে। তিনিই হোটেল চালাচ্ছিলেন। আমাদের ভবনে অগ্নি নির্বাপণের সব ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ভবনে আমাদের কোনো কর্মচারী ছিল না।
Add Comment