Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 9:59 pm

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় ধরনের গোলযোগ ও সহিংসতা ছাড়াই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে জোর করে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরার চেষ্টা ও অনিয়মের ঘটনায় ৯ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন। এছাড়া আরও কিছু কেন্দ্রে গোলযোগ, অনিয়ম, এজেন্টদের বাধা ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
১১ লাখ ৩৭ হাজার ভোটারের এ সিটির ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টায় একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। যা একটানা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা। অবশ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে পৌঁছেছেন। তাদের সবার ভোটই নেওয়া হবে বলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন ভালো হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ হলেও এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। অন্যদিকে; বিএনপি শতাধিক কেন্দ্রে অনিয়ম, জালভোট দেওয়ার এবং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
মোট ভোটকেন্দ্র ৪২৫টি এর মধ্যে নানা অনিয়মের কারণে সাতটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন উৎস থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফল পাওয়া গেছে। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ২০৭টি কেন্দ্রের ফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নৌকা প্রতীক পেয়েছে দুই লাখ ৩২ হাজার ৮০৫ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন এক লাখ চার হাজার ৬৯১ ভোট। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২৪টি কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে নৌকা পেয়েছে ১৭ হাজার ৫২৩ ভোট। আর ধানের শীষ পেয়েছে ৯ হাজার ৫৫৪ ভোট। সব কেন্দ্রের ফলাফলের ভিত্তিতে বেসরকারিভাবে নির্বাচন কমিশন বিজয়ী প্রার্থী ঘোষণা করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টির ভোট গ্রহণ তারা স্থগিত করেছেন। কেন্দ্রগুলো হলোÑ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপুরের ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (৯৮ নম্বর কেন্দ্র), ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পশ্চিম জয়দেবপুরের মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা-১ (১৬৬ নম্বর কেন্দ্র), ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুনিয়া হাজী আবদুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র (২৪৩ ও ২৪৪ নম্বর কেন্দ্র), ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিন্দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (২৭৪ নম্বর কেন্দ্র), ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের জাহান পাবলিক দত্তপাড়া কেন্দ্র (৩৪২ নম্বর কেন্দ্র), ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে (৩৭২, ৩৭৩ নম্বর কেন্দ্র), ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী পিয়ারআলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩৮১ নম্বর কেন্দ্র)।
এসব কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৫৯ জন বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়েছে। এখন ভোট গণনা ও ফল ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯টি। প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন। কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ৪২৫টি ভোটকেন্দ্র, তাতে ভোটকক্ষ ২৭৬১টি। ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন; পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী। ছয়টি কেন্দ্রে (১৫৪, ১৫৫, ১৭৪, ১৭৫, ১৯১ ও ১৯২) ভোট হয়েছে নতুন ইভিএমে।
এ সিটির মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের বিপরীতে এবার ৩৯ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলমকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। ৭০ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা হাসান সরকার এরশাদের সামরিক শাসনামলে দুই দফায় সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন টঙ্গী পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান সরকার এক মেয়াদে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তার চেয়ে ৩১ বছর কম বয়সী ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম গত মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চেয়ে আলোচনায় আসেন। গতবার বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে বাদ দিয়ে এবার তরুণ এ নেতাকে নির্বাচনী টিকিট দেয় ক্ষমতাসীন দল। অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদের প্রতীক টেবিল ঘড়ি।