Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:11 am

গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার গতকাল সকালে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সারফরাজ আনোয়ার।

জানা গেছে, গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাওয়ার সময় পড়ে যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এরপর হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মেয়ে দিঠি আনোয়ার একজন কণ্ঠশিল্পী। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আছেন। মেয়ে দেশে ফিরলে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ছেলে সারফরাজ আনোয়ার।

পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্রের গান ও কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানের রচয়িতা।

তিনি ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ার তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। বছরের পর বছর তিনি গান লিখেছেন। তার গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ ও অনুভূতির কথা। এখন পর্যন্ত তার রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। জনপ্রিয় বেশ কিছু ঢাকাই সিনেমার পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন তিনি। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’সহ অসংখ্য গানের গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক তিনি।

১৯৬২ সালে গাজী মাজহারুল আনোয়ার লিখেছিলেন প্রথম গানÑ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে।’ গানটির সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমীন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয়ের মাধ্যমে পেশাদার গীতিকার হিসেবে জীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা করতে শুরু করেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে তার অবদান ছড়িয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অঙ্গনে।

সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রে ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি একজন সফল কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেশ চিত্রকথা থেকে ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘ক্ষুধা’, ‘স্নেহ’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘আর্তনাদ’, ‘পাষাণের প্রেম’ ও ‘এই যে দুনিয়া’ নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন তিনি।

বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটি গান গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা। গানগুলো হচ্ছে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ ও ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’। গীতিকার হিসেবে তিনি পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এসএম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অনেক সম্মাননা রয়েছে তার ঝুলিতে।

কিংবদন্তিতুল্য গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জানাজা ও দাফনের সময় জানানো হয়েছে। আজ সোমবার বাদ আসর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে এ গীতিকারকে দাফন করা হবে। গতকাল দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল। তিনি জানান, আজ (সোমবার) সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হবে। সেইসঙ্গে সংস্কৃতি অঙ্গন ও সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর গাজীর মরদেহ নেয়া হবে চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসিতে। সেখানে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম জানাজা। সেইসঙ্গে সিনেমাসংশ্লিষ্টরা তাকে শ্রদ্ধা জানাবেন।

বাদ আসর গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ রাখা হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। এরপর বনানী কবরস্থানে তার মা খোদেজা বেগমের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জানাজা ও দাফনে বিলম্ব হওয়ার কারণ তার মেয়ে দিঠি আনোয়ার। তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। গত শনিবার দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।