Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:04 pm

গাড়িতে চীনা প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে গাড়ি, ট্রাক ও বাসে চীন ও রাশিয়ার তৈরি কিছু হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর: এবিসি নিউজ।
কর্মকর্তারা বলছেন, স্বচালিত গাড়ি চালাতে এবং গাড়িকে অন্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করতে ব্যবহƒত প্রযুক্তিগুলো শত্রুদের যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় দূর থেকে গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দিতে পারে বলে তারা উদ্বিগ্ন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িতে চীন বা রাশিয়ার তৈরি সফটওয়্যারের ব্যবহার খুবই কম। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য এসব পরিকল্পনা যথাযথ পদক্ষেপ। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এখনকার গাড়িগুলোয় ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, জিপিএস ট্র্যাকিং ও ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য প্রযুক্তি রয়েছে। এই তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকলে একটি বিদেশি প্রতিপক্ষ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও আমেরিকান নাগরিকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে। এদিকে চীনের কর্মকর্তারা বলছেন, আমেরিকা চীনের সংস্থাগুলোকে অন্যায়ভাবে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য জাতীয় সুরক্ষার ধারণা প্রসারিত করছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার ধারণা বিস্তৃত করা এবং চীনা কোম্পানি ও পণ্যের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিরোধিতা করে চীন।
তিনি বলেন, আমরা আমেরিকাকে চীনের বাজারের নীতিগুলোর সম্মান রক্ষার এবং চীনের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি উš§ুক্ত, ন্যায্য, স্বচ্ছ ও বৈষম্যহীন ব্যবসায়িক পরিবেশ সরবরাহ করার আহ্বান জানাই।
গাড়ি উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনে চীনের উপস্থিতি সীমিত করার লক্ষ্যে হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ প্রস্তাবটি শিগগির কার্যকর হবে। হোয়াইট হাউস বৈদ্যুতিক গাড়ি, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও অন্যান্য অনেক পণ্যের ওপরও শুল্ক বাড়িয়েছে। বাইডেন প্রশাসন চীনা আমদানি পণ্যে বড় মাত্রায় শুল্কহার বাড়িয়েছে, যার মধ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ওপর শুল্ক এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও মূল খনিজগুলোর ওপর নতুন শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা সতর্ক করে আলাদাভাবে চীনে তৈরি কার্গো ক্রেন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্র গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের প্রযুক্তি সংযুক্ত গাড়িগুলোর সাইবার ঝুঁকি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। চীন থেকে আমদানি করা যানবাহনে ‘কানেকটেড গাড়ি প্রযুক্তি’ (ইন্টারনেট, ব্ল–টুথের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তি) জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না, তা ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের নির্দেশ দেন জো বাইডেন। চীনের সেই সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সমস্ত মার্কিন যানবাহনে নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, তাও খতিয়ে দেখতে বলেন।
সফটওয়্যারের ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলো ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হবে। হার্ডওয়্যার বিধিগুলো তিন বছর পরেই কার্যকর হবে এবং ইন্ডাস্ট্রিকে তাদের সাপ্লাই চেইনগুলো আবারও গঠন করার জন্য আরও সময় দেয়া হবে। হার্ডওয়্যারের নিষেধাজ্ঞা ২০২৯ সালের জানুয়ারি অথবা ২০৩০ সালে বাজারে গাড়িগুলোর ওপর কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আওতায় ব্ল–টুথ, স্যাটেলাইট ও ওয়ারলেস ফিচারসহ যানবাহন থাকবে। পাশাপাশি এমন স্বয়ংক্রিয় যানবাহনও অন্তর্ভুক্ত হবে, যেগুলো ড্রাইভার ছাড়া একাই চলতে পারে।

বড় গাড়ি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স ফর অটোমোটিভ ইনোভেশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী জন বোজেলা বলেন, যদিও চীন থেকে আমেরিকায় প্রবেশ করা গাড়ির সরবরাহ চেইনে খুব কম হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার প্রযুক্তি রয়েছে, তবে এই নিয়ম কিছু প্রতিষ্ঠানকে নতুন সরবরাহকারী খুঁজতে বাধ্য করবে। বাণিজ্য বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, নিয়মগুলো চূড়ান্ত করার আগে জনসাধারণকে ৩০ দিন মন্তব্য করার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে চলমান প্রায় সব নতুন যানবাহনকে ‘কানেকটেড’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব যানবাহনে অনবোর্ড নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার থাকে, যা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এভাবে গাড়ির ভেতরে ও বাইরের ডিভাইসের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা যায়। সূত্র অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার মতো অন্য বিদেশি প্রতিপক্ষ দেশগুলোর ওপরও প্রযোজ্য হবে।