গাড়ি যন্ত্রাংশের বাজার বাড়ছে বসতে পারে ‘এমআরপি’

রহমত রহমান: দেশের রাস্তায় প্রতিদিনই নামছে নতুন গাড়ি। সঙ্গে থাকছে পুরোনো গাড়ি। নতুন ও পুরোনো প্রতিটি গাড়ির জন্য পার্টস প্রয়োজন হয়। ফলে সড়কে গাড়ির বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে ছোট-বড় পার্টসের চাহিদা। দেশের পার্টসের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। দেশে আনুমানিক প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পার্টসের বাজার রয়েছে। গাড়ি বাড়ার সঙ্গে পার্টস বাজার প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমদানিনির্ভর হলেও প্রায় সময় পার্টসের বাজার অস্থিতিশীল থাকে। রয়েছে অরজিনাল পার্টস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ডিউটি ও খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে নামমাত্র ভ্যাট পায় সরকার। তবে পার্টস আমদানির ক্ষেত্রে হয় আন্ডার ইনভয়েসিং। পার্টস বিক্রয়ে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) বসানোর চিন্তা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

কর্মকর্তারা বলছেন, পার্টস খাতে অস্থিরতা দূর ও এই খাত থেকে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে এমআরপি বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে। তবে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমদানিকারকরা বলছেন, পার্টসের বর্তমান বাজার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। প্রতিনিয়ত এই বাজার বাড়ছে। প্রায় ১০ হাজারের বেশি পার্টস আমদানি হয়। এত পার্টসে এমআরপি বসানো সম্ভব নয়। সরকার ডিউটি ফিক্সড করে দিলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৫ হাজার। ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৩। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছর ৬৪ জেলায় মোট চার লাখ ৬৯ হাজার ১৬৭টি গাড়ি নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন সড়কে নিবন্ধিত গাড়ি নেমেছে এক হাজার ২৮৬টি।

পার্টস আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নতুন ও পুরোনো সব গাড়ির জন্য পার্টস প্রয়োজন হয়। পার্টস বাজারের ৯০ শতাংশ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব পার্টস মূলত চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, জাপান ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা হয়। বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, হিউম্যান হলার, ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ির টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ইঞ্জিন অয়েল, ব্যাটারি থেকে শুরু করে যাবতীয় পার্টসই আমদানি করতে হয়। বাকি ১০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়।

কিন্তু এসব পার্টসের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে মানহীন পার্টস কিনে একদিকে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বাজারে পার্টসের দাম তদারকির জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। আবার মার্কেটভেদে পার্টসের দাম একেক রকম হয়ে যায়। পার্টসের গায়ে কোনো দাম লেখা থাকে না। ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামাফিক দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করছেন। আবার পার্টস অরজিনাল কি না, তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই।

পুরান ঢাকার কাজী অটোমোবাইলসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, জাপান, চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে পার্টস আমদানি করা হয়। ৯০ শতাংশ পার্টস-ই আমদানি হয়। বাকি ছোটখাটো ১০ শতাংশ পার্টস দেশে উৎপাদন হয়। পার্টসের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ে সরকার পার্টসের দামে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) বসাতে চায়Ñএই বিষয়ে তিনি বলেন, কখনও এমআরপি বসাতে পারবে না। কারণ আমদানি দামের ওপর নির্ভর করে পার্টসের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করা হয়।

বিশেষ করে কাস্টমস ডিউটি, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দামের ওপর নির্ভর করে পার্টসের দাম। কখনও কাস্টমস ডিউটি বাড়ে, কখনও কমে। সরকারের উচিত এই খাতে ডিউটি নির্ধারণ করে দেয়া। ফলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা আমদানির সময় ডিউটি দিয়ে আসি। আবার খুচরা পর্যায়ে বিক্রির ওপর সরকারকে ভ্যাট দেয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মোটর পার্টস অ্যান্ড টায়ার টিউব মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোবারক আলী শেয়ার বিজকে বলেন, প্রায় ১০ হাজার মটর পার্টস রয়েছে। একেক পার্টসের দাম একেক রকম। আমরা আমদানিতে ডিউটি দিয়ে আসি। এরপর ২০ শতাংশ প্রফিট হিসেব করে খুচরা বিক্রির ওপর সরকার ভ্যাট নেয়। কারণ বিভিন্ন দেশ আর পার্টসের কোয়ালিটির ওপর দাম নির্ধারিত হয়। জাপানি একটি পার্টসের দাম তিন হাজার টাকা। একই পার্টস ভারতে তৈরি হলে দাম হয় ৮০০ টাকা। সরকার ডিউটি নির্ধারণ করে না দিলে এমআরপি বসাতে পারবে না। বাজারও স্থিতিশীল করতে পারবে না।

এই বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে আমদানি করা পার্টসে ডিউটির পাশাপাশি ৫ শতাংশ অগ্রিম কর নেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে রিটার্ন না দিলে এই ভ্যাট ফেরত পায় না। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে বিক্রির ওপর ভ্যাট আদায় করা হয়। সরকার চাইলে আগামী অর্থবছর এমআরপি বসাতে পারে। তবে এমআরপি কার্যকর করতে হলে পরিকল্পনা করতে হবে। এই খাতের বাজার যাচাই করে বসাতে হবে। পার্টস আমদানিতে এমনিতে আন্ডার ইনভয়েসিং হয়। সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় করতে হলে এমআরপি বসানোর পাশাপাশি আন্ডার ইনভয়েসিং রোধ করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০