গাড়ি মেরামত সেবাকে দিন প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি

আয় বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের মানুষের মধ্যে বেড়ে উঠেছে গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা। এর প্রভাব যে এ ধরনের যান মেরামতেও পড়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এমন সেবা জোগানোর জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান। এসবের কোনো কোনোটির ব্যবসাও চলছে ভালো। কিন্তু সেবা খাত হিসেবে ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলেনি। শেয়ার বিজকে দেওয়া মন্তব্যে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, নিয়মিত সেবার খাত হিসেবে গড়ে ওঠায় এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ জরুরি। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় দাবিও তোলা হয়েছে পেশায় যুক্তদের পক্ষ থেকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের দাবি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আনুষ্ঠানিক খাত হিসেবে স্বীকৃতি মিললে এ পেশায় যুক্তরা যেমন বেশকিছু সুবিধা পাবেন, তেমনি খাতটির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও সহজ হবে। সেবা নিতে গিয়ে মানুষ বিভিন্ন সময় যেসব ভোগান্তির শিকার হয়, এর মাধ্যমে সেটিও রাখা যাবে নিয়ন্ত্রণে।

বস্তুত দেশে মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্রভাবে যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনি গাড়ি বিক্রিকারী নামি প্রতিষ্ঠানও এ সেবা জোগাচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এর সঙ্গে যুক্ত থাকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনশক্তি। এদের কেউ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত। কেউ আবার এ-বিষয়ক জ্ঞান রপ্ত করেছেন কাজে যুক্ত থেকে, ব্যবহারিকভাবে। জানা যায়, স্বীকৃত খাত না হওয়ায় একে পেশা হিসেবে নিতে উৎসাহ বোধ করছেন না এমন শিক্ষায় শিক্ষিত অনেকে। খাতটিকে স্বীকৃতি দিলে এর প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে বলেই মনে হয়। এ কৌশল কাজে লাগিয়ে এমন শিক্ষিত বেকার কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে। এজন্য আমরা চাইবো, উত্থাপিত দাবি বিবেচনায় এসব বিষয় ভেবে-চিন্তে দেখবেন নীতিনির্ধারকরা।

কোনো খাতের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সেখানে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় স্বভাবতই। গাড়ি মেরামতের জন্য যাদের বিভিন্ন সময় কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হয় সেখানকার তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো তাদের চেয়ে আর কে ভালো বলতে পারে! বর্তমানে বড় করপোরেটের সঙ্গে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান যেমন চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছে নিজেদের প্রয়োজনে, তেমনি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানও কোনো কোনো ক্ষেত্রে করপোরেটের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করছে নিজেদের স্থায়ী গ্রাহক বাড়াতে। এ অবস্থায় কাঠামোগত নীতি-পদ্ধতি প্রণয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে সময়ের চাহিদা পূরণে। এটি থাকলে তার সুবিধা পাবে উভয় পক্ষ। এ ব্যাপারে বিধি প্রণয়নের জন্যও সবার আগে থাকা চাই খাতটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

এটা ঠিক, স্বীকৃতির সঙ্গে কোনো পেশার মর্যাদার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাঠামোগত কারণে কোনো পেশার মর্যাদা কমে গেলে তার সঙ্গে যুক্ত হতে মানুষ খুব একটা আগ্রহ বোধ করে না; সম্ভবত এক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে কাজ করে সামাজিক ও বৈষয়িক কিছু বিবেচনা। এতে জনবল-সংকটে পড়তে হয় সেবা জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানকে। এটাও সেবার দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। মনে রাখা দরকার, দেশে যে হারে গাড়ি বাড়ছেÑমেরামতকারী প্রতিষ্ঠানে যদি নতুন লোক সে হারে যুক্ত করা না যায়, তাহলে সেবাটির দাম বেড়ে উঠবে বাজারের নিয়মে। দীর্ঘমেয়াদি এসব বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেও খাতটির স্বীকৃতি দরকার। বলা বাহুল্য, এ খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোও সম্ভব হবে। রাস্তাঘাট দখল করে সেবা দেওয়ার প্রবণতা একশ্রেণির প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেভাবে গড়ে উঠেছে, তাও কমানো যেতে পারে একে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে। যানজট কমানোর ক্ষেত্রেও এটা রাখবে ইতিবাচক প্রভাব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০