গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে: নজরুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক: পতিত স্বৈরাচারের দোসররা গুজব ছড়িয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে গত বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নাই। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে বলেই মনে করবেন না যে সব স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের দোসররা পালিয়ে গেছে; না, আছে তারা। নানা রকম গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। আপনাদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে, সাবধান থাকতে হবে। কোনো রকমের গুজব, কোনো রকমের বিভ্রান্তিতে যেন আমরা পা না দিই।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, ওদের (আওয়ামী লীগ) পক্ষে দেশে-বিদেশে শক্তি আছে, ওদের অনেক টাকা-পয়সা আছে, তারা নানাভাবে চেষ্টা করতে পারে আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির। সেটা যেন করতে না পারে। কারণ মনে রাখতে হবে শহিদ জেহাদ থেকে আরম্ভ করে এর আগের এবং পরের যারাই আমাদের ভাইবোনরা শহিদ হয়েছেন, যারাই আমাদের ভাইবোনরা গুম হয়েছেন, তাদের রক্ত কিংবা তাদের স্মৃতির প্রতি আমাদের যে দায় আছে, তা আমাদের পরিশোধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, যারা বেঁচে আছেন, তাদের দায়িত্ব হলো ‘শহিদদের’ স্মৃতি মনে রাখা এবং যার জন্য তারা জীবন দিয়েছেন, সেটা অর্জন করা।

‘সেই অর্জন করার পথে যে কোনো বাধা এলে সেই বাধাকে আমাদের অতিক্রম করতে হবে। অতিক্রম করতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে।’ রাজনীতিতে জনগণের চেয়ে শক্তিশালী ‘আর কেউ নেই’ মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আল্লাহর মেহেরবাণীতে সেই জনগণের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা আছে শহিদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিপুল জনপ্রিয়তা আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের। কাজেই আমাদের উচিত জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা, তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করা।’ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘৯০-এর জেহাদ স্মৃতি পরিষদ’-এর উদ্যোগে এ আলোচনা সভা হয়।

ছাত্রদল নেতা জেহাদ ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে নিহত হলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হয়। জেহাদের লাশ ছুঁয়ে তৎকালীন ছাত্রনেতারা শপথ নেন স্বৈরাচার এরশাদকে হঠানোর। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়েন এরশাদ। গতকাল সকালে রাজধানীর রাজউক অ্যাভিনিউয়ের জেহাদ স্কয়ার স্মৃতিস্তম্ভে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলমসহ নেতাকর্মীরা।

আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এমনও আছে, যাদের আমরা হয়তো চিনতে ভুল করছি, মনে হচ্ছে আমাদের পক্ষে। ওই লোকগুলো আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার মতো সেøাগান দেয়, অনৈক্য সৃষ্টি করার মতো কথা বলে, যাতে করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে যারা বা যে শক্তি, তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়।’ তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য আছেÑমন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা জানে যে, এদেশের জনগণের মনমানসে বিএনপির অস্তিত্ব এতই প্রসারিত, এতই প্রোথিত হয়ে আছে যে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের সম্ভাবনা খুব কম। অতএব বিএনপিকে হেয় করা যায় কীভাবে, বিএনপির জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করা যায় কীভাবে, বিএনপির দুর্নাম করা যায় কীভাবেÑএরকম ষড়যন্ত্রে কেউ কেউ লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।’

কোনো দল বা জোটের নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা পরস্পর শত্রু নই। আসুন, আমরা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হই। আপনি আপনার কথা বলেন, আমি আমার কথা বলি। আপনার অতীতও জনগণ জানে, আমার অতীতও জনগণ জানে। আগামী দিনে যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণ নির্ধারিত করবে কাকে তারা তাদের কল্যাণের জন্য দায়িত্ব দেবে সরকার পরিচালনার।
‘কিন্তু সেটা না করে মিথ্যা কথা বলা, অন্যায়ভাবে সমালোচনা করা আল্লাহ পছন্দ করেন না সেইগুলো।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দুর্গা উৎসব চলছে। সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদেরও আছে। কারণ কিছু মানুষ আছে যারা চক্রান্ত করে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমাদের দেশের বদনাম করার চেষ্টা করবে। এই সরকার কিংবা যারা এ সরকারকে নিয়ে এসেছে, তাদের হেয় করার চেষ্টা করবে। এটা যাতে করতে না পারে, সেই নজর আমাদের রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যে, তারা এদেশের নাগরিক, তারা তাদের ধর্ম পালন করবে যথাযথভাবে এবং নিরাপদে নিশ্চিন্তে যেন তারা ধর্ম পালন করতে পারে, এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের।’

সাম্প্রতিক বন্যার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, ‘আজকে বন্যা হচ্ছে অনেক জায়গায়, বিভিন্ন জায়গায় প্লাবন হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের বিপদে তাদের সঙ্গে থেকে তাদের ভালোবাসা আমাদের অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে আমাদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া লাগবে। আজকে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা হচ্ছে। বহু পুলিশ এখনও যোগ দেয় নাই, অনেক জায়গা কাজকর্ম ঠিকমতো শুরু হয়নি। সেসব জায়গায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা ভূমিকা রাখতে পারি।’

নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের মধ্যে আসাদুজ্জামান রিপন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান আসাদ, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, ছাত্রদলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিব ও শহীদ জেহাদের বড় বোন চামেলী মাহমুদ বক্তব্য দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০