গুঞ্জনে বাড়ছে লোকসানি উসমানিয়া গ্লাসের দর!

পলাশ শরিফ: প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ও কাচের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। সর্বশেষ গত দুই অর্থবছর ধরে লোকসান দিচ্ছে প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এ কোম্পানিটি। চলতি অর্থবছরেও লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও প্রায় দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। তবে কোম্পানির অবস্থার অবনতি হলেও শেয়ারদর নিয়ে গুঞ্জন চলছে। এর জের ধরে গত এক মাসে লোকসানি এ কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক মাস আগে গত ১২ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) উসমানিয়া গ্লাসের প্রতিটি শেয়ার ৮৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১০৪ টাকা ছাড়িয়েছে। সেই হিসেবে গত এক মাসে লোকসানি এ কোম্পানির শেয়ারদর ১৫ টাকা ৪০ পয়সা বা প্রায় ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে। রোববার ১০৪ টাকা ৭০ পয়সায় সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক দরবৃদ্ধির পেছনে ‘অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই’ বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। গত ৭ ডিসেম্বর ডিএসইর পাঠানো নোটিশের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে কোম্পানিটির শেয়ার দরকে প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্যানুসন্ধানে মিলেছে, ১৯৫৯ সালে বেসরকারি কাচ উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে উসমানিয়া গ্লাস। এরপর ১৯৬২ সালের অক্টোবরে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। এ খাতের একমাত্র কোম্পানি হওয়ায় দীর্ঘদিন লাভজনক অবস্থানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন কোটি ৯১ লাখ টাকা মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। এরপর থেকে লোকসানে পড়েছে  এ কোম্পানি। পরে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ কোটি ১২ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও উসমানিয়া গ্লাসের শেয়ারপ্রতি পাঁচ টাকা ৪৮ পয়সা লোকসান হয়েছে। একইভাবে শেয়ারপ্রতি সম্পদ ৯ টাকা ৯৯ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আর চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত উসমানিয়া গ্লাস প্রায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে।

এর আগে অবস্থা সম্পর্কে উসমানিয়া গ্লাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহিদুল বারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে উৎপাদন ও গুণগত মান কমছে। বাজারে চাহিদা থাকলেও ছয় মিলিমিটারের বেশি ঘনত্বের কাচ আমরা উৎপাদন করতে পারছি না। পাশাপাশি  প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কাচের দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছি। মূল্য ছাড় ও  ক্রেতাদের কমিশনও দিতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে সরকারি নতুন বেতনকাঠামোর কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়ছে। এসব কারণেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সংকট উত্তরণে কারখানার আধুনিকায়নের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও নতুন পণ্যের বিকল্প নেই। আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে দুই থেকে ছয় মিলিমিটার ঘনত্বের কাচ উৎপাদন করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীন কোম্পানিটি। পুরোনো প্রযুক্তির কারণে কাচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ কোটি ১৫ লাখ বর্গফুট কাচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার বর্গফুট কাচ উৎপাদন করতে পেরেছে উসমানিয়া গ্লাস। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। একই কারণে উৎপাদিত কাচের গুণগত মানও কমছে। এ কারণে দিন দিন উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

এদিকে দিন যতই যাচ্ছে, কাচ উৎপাদনে নতুন নতুন কোম্পানি ও আধুনিক প্রযুক্তি আসছে। ফলে এ অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ওসমানিয়া গ্লাস। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে নাসির গ্লাস, পিএইচপি গ্লাস ও এমইবি গ্লাসের উৎপাদন খরচ ওসমানিয়া গ্লাসের উৎপাদন খরচের তুলনায় কম। বাজার দখল করতে এ কোম্পানিগুলো কাচের দাম কমিয়েছে। আর প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে দুই বছরে কাচের দাম প্রতি বর্গফুটে গড়ে ছয় টাকা কমাতে বাধ্য হয়েছে ওসমানিয়া গ্লাস। পাশাপাশি মূল্যছাড় ও বিক্রেতাদের কমিশনের পেছনেও বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব কারণে বিক্রি বাড়লেও লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছে কোম্পানিটি। তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো হলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির লোকসানের কারণে সর্বশেষ দুই অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ হারে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট প্রায় এক কোটি ৪৩ লাখ শেয়ারের ৫১ শতাংশই বিসিআইসির হাতে রয়েছে। এর বাইরে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে আট দশমিক নয় শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০