শেয়ার বিজ ডেস্ক: তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রির বেশি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিঙ্গাপুরের জুরং কোল্ড স্টোরেজের অ্যালার্ম বেজে ওঠে। এক বছর আগে ছিন বি ড্রাইভে অবস্থিত এই কোল্ড স্টোরেজের তাপমাত্রা সার্বক্ষণিক দেখভাল করতেন রক্ষণাবেক্ষণ দল। হিমায়িত পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি একটি বিশেষ নীতিমালা মেনে চলেÑস্যামন কিংবা ওয়াগু গরুর মাংস ৩০ মিনিটের বেশি উষ্ণ তাপমাত্রায় রাখে না তারা। প্রসঙ্গত, বিশ্বে দারুণ জনপ্রিয় ও মজার খাবার ওয়াগু গরুর মাংস। একে সব মাংসের সেরা বলা হয়। এই মাংসের গুণগত মানসম্পন্ন ফ্যাট, রান্নার পর এর ফ্লেভার ও রসালো ভাবের ভূমিকা রয়েছে।
জুরংয়ের এই কোল্ড স্টোরেজ এই ধরনের ও অন্যান্য কিছু নীতিমালা প্রবর্তন করেছে, যেগুলো তাদের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করেছে এবং বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে।
সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, সিঙ্গাপুর স্ট্যান্ডার্ড (এসএস) ৬৬৮ নামের কর্মসূচি চালু করার পর, আলোচিত হিমায়িত প্রতিষ্ঠানটি চিলি ও নরওয়ের বাজারে প্রবেশ করেছে এবং চীনের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যারেন লি বলেন, উৎপাদকরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য আমাদের সুবিধা গ্রহণ করেছে। তারা আমাদের সেবায় আস্থা রেখেছেন।
এ কর্মসূচি যাত্রা করে গত অক্টোবরে। ঠাণ্ডা ও হিমায়তি পণ্যের জন্য এই কর্মসূচিতে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রাখা হয়েছে। লি বলেন, বেশিরভাগ শর্ত মেনে চলছেন শিল্প-সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রায়ই কর্তৃপক্ষ কিংবা ব্যবসা মালিকরা সমস্যায় পড়ছে শর্টকাট পদ্ধতি অনুসরণ করেন। আমরা সবসময় নীতিমালা অনুসরণ করি এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নিরীক্ষা করি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থার্ডপার্টি সার্টিফিকেশন সংস্থা নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এসএস ৬৬৮ মেনে চলছে কি না যাচাই করবে।
গুণগতমান বজায় রাখার কারণে জুরং কোল্ড স্টোরেজের মতো সিঙ্গাপুরের ৭০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান (এসএমই) রপ্তানি বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণ করেছে বলে এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের (এন্টারপ্রাইজএসজি) এক জরিপে দেখা গেছে। এই জরিপে নগররাষ্ট্রটির এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সমীক্ষায়
দেখা গিয়েছে, গুণমান ও অবকাঠামো মেনে চলার কারণে প্রায় ৯০ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় পণ্য ও সেবায় এগিয়ে।
এন্টারপ্রাইজএসজি-এর মহাপরিচালক চোই সাউ কুক বলেন, মান বজায় রাখা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়তে পেরেছে। এতে আরও দেখা গেছে, এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য, যারা মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ধরনের সার্টিফিকেশন একটি প্রতিষ্ঠানে ভাবমূর্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ভোক্তার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুর নিয়মিত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মান ও অ্যাক্রেডিটেশন কমিটির আলোচনায় যোগ দিয়ে আসছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বৈশ্বিক কর্মসূচিতে ভূমিকা রাখে এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করে।
ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য গত বছর নতুন পারস্পরিক চুক্তি করে সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে রয়েছে, ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা ও ঘুষ না নেয়া। বিশ্বে ১০০টি দেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের এমন বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে তাদের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করতে পারছে। এটি সিঙ্গাপুরের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পণ্য ও সেবার স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। চুক্তির আওতায় পণ্যের পুনঃপরীক্ষা, পুনঃনিরীক্ষণ কিংবা পুনরায় প্রস্তুত করার প্রয়োজন পড়ে না।
সিঙ্গাপুর স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল গত বছর ১০০টির বেশি মান পর্যালোচনা করেছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী সক্ষমতা তৈরি করতে পারে এবং দেশের বাইরে প্রতিযোগিতামূলক অগ্রগতি অর্জন করতে পারে। প্রসঙ্গত, ১০০টি মানের মধ্যে ৬২টি নতুন। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রবার্ট
চউ বলেন, কাউন্সিল পণ্যের গুণ ও মান, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, টেকসই ও সহনশীলতার ক্ষেত্রে আপস করে না।